বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে বড় রদবদল করা হয়েছে। বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক (ডিডিজি) পদমর্যাদার ৯ জন এবং পরিচালক পদমর্যাদার ১০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
রোববার (২৬ আগস্ট) রাতে অঙ্গীভুত আনসার সদস্যদের সচিবালয় ঘেরাও এবং ছাত্রদের উপর হামলা ও সংঘাতের ঘটনার পর আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে এই রদবদল করা হয়।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ আনসার শাখা-১ এর উপসচিব ফৌজিয়া খানের স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আনসার একাডেমির ডেপুটি কমান্ডার নুরুল হাসান ফরিদীকে খুলনা রেঞ্জে, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিডিজি সাইফুল্লাহ রাসেলকে সদর দপ্তরের (অপারেশন), খুলনা রেঞ্জের ডিডিজি শাহ আহমদ ফজলে রাব্বীকে রাজশাহী রেঞ্জে, সিলেটের ডিডিজি মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালকে ময়মনসিংহ ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিডিজি কামরুন নাহারকে আনসার একাডেমির ডেপুটি কমান্ডার করা হয়েছে।
এ ছাড়া, সদর দপ্তরের ডিডিজি অপারেশন ফখরুল আলমকে বরিশাল রেঞ্জে, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিডিজি সাইফুর রহমানকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে, বরিশাল রেঞ্জের ডিডিজি আশরাফুল আলমকে ঢাকা রেঞ্জে এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিডিজি জিয়াউল হাসানকে সিলেট রেঞ্জ বদলি করা হয়েছে।
সদর দপ্তরের পরিচালক, ভিডিপি (প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনকে খাগড়াছড়ি দিঘীনালা জামতলা ১৭ আনসার ব্যাটালিয়নে, সদর দপ্তরের পরিচালক (অঙ্গীভূতকরণ) মো. আহসান উল্লাহকে ঠাকুরগাঁও ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়নে, রাঙ্গামাটি কাপ্তাই শিলছড়ির পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুজ্জামানকে সদর দপ্তরের পরিচালক (অঙ্গীভূতকরণ), সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) সৈয়দ ইফতেহার আলীকে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই শিলছড়ির ৩৫ আনসার ব্যাটালিয়নে, বান্দরবান লামা চম্পাতলীর পরিচালক মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীকে সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস), সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রকল্প-প্রশিক্ষণ) তাসকিন আরাকে গাজীপুরের সফিপুর আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে, গাজীপুরের সফিপুর আনসার ও ভিডিপির পরিচালক সারোয়ার জাহান চৌধুরীকে বরিশাল রেঞ্জের পরিচালক, সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) জাহানারা আক্তারকে গাজীপুরের সফিপুর আনসার ও ভিডিপির পরিচালক, খাগড়াছড়ি দিঘীনালা জামতলার পরিচালক ফাতেমা-তুজ-জোহরাকে সদর দপ্তরের পরিচালক (ভিডিপি-প্রশিক্ষণ) এবং রাঙ্গামাটি ঘাগড়ার পরিচালক মুন মুন সুলতানাকে সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
রোববার (২৬ আগস্ট) রাতে অঙ্গীভুত আনসার সদস্যদের হামলায় অন্তত: ৪০ জন ছাত্র আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফেনিসহ দেশের একটি বড় এলাকা যখন ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে, সারাদেশের মানুষ বন্যার্তদের নিয়ে মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন, তখন তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে ঢাকায় অঙ্গীভুত আনসার সদস্যদের মহাসাবেশ আহ্বান ও পরবর্তীতে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর বিষয়টিকে অনেকেই সন্দেহজনক মনে করছেন। বিশেষ করে রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের প্রধান দাবি ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিল করার আশ্বাস দেওয়ার পরও আন্দোলনের নামে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ, রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েক হাজার আনসার সদস্য। দুপুর ১টার দিকে আনসার তারা প্রেস ক্লাব ও কদম ফোয়ারার রাস্তা ছেড়ে দিয়ে তারা জিরো পয়েন্ট ও সচিবলয়ের রাস্তা অবরোধ করেন। পরে সচিবালয়ের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, বর্তমানে সাধারণ আনসারদের যে রেস্ট প্রথা বা ছয় মাসের বিরতি রয়েছে, সেটা বাতিল করা হবে। কিন্তু তার এই আশ্বাসের পরও আনসারদের একটি অংশ বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা সচিবালয়ের গেট ঘেরাও করে উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটকে রাখেন। এ সময় ছাত্রদের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা দল বেঁধে সচিবালয়ে ছুটে আসেন। এই ছাত্রদের উপর তখন আনসার সদস্যরা হামলা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তাতে শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন। পরে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও ছাত্রদের ব্যাপক ধাওয়ার মুখে রাত ১০টার দিকে আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা থেকে পালিয়ে যায়।
অর্থসূচক/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.