ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসহাক আলী খান পান্নার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে মৃত্যু হয় তার।
শনিবার (২৪ আগস্ট) ভোররাতে সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারত পালিয়ে যান ইসহাক আলী খান পান্না। মেঘালয় রাজ্যের শিলং যাওয়ার পর পাহাড় থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
পান্নার মৃত্যু সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবারের একাধিক সদস্য দাবি করেছেন, পান্না শিলং পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে গেলে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে অন্য কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, শিলং পাহাড়ে উঠার সময় বিএসএফের গুলিতে মারা যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মৃত পান্নার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, তার লাশের এক পাশে রক্তের ছোপ। এছাড়া তার পায়েও রক্ত লেগে আছে। তবে শরীরের দৃশমান অংশে (বুক, মুখ ও হাত-পায়ে) গুলি বা আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
তবে কোনো বক্তব্য সম্পর্কেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। ওইদিনই তার পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পিরোজপুরের পৈত্রিক নিবাসে পৃথক দ্বিতল ভবন করেছিলেন পান্না, সেখানেই ভাঙচুর চলে। তার এক ভাই ওই বাড়িতে থাকলেও সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়িতে তার যাতায়াত তেমন নেই। পিরোজপুরে গেলে শহরের বাড়িতেই থাকতেন তিনি।
পান্নার বড় ভাইয়ের শ্যালক জসিম উদ্দিন খানের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তার। জসিম জানিয়েছেন, তিনদিন আগে পান্নার সাথে তার ফোনে কথা হয়েছে। ২৫ জুলাই তিনি পিরোজপুর শহরের বাড়িতে এসে দু’দিন পর ফিরে যান।
জসিমের দেয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন পান্না। ওপারেই তার মৃত্যু হয়। সেটা গুলিতে নাকি স্ট্রোকজনিত কারণে তা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। সীমান্তের ভারত প্রান্তের একটি থানায় তার লাশ রয়েছে বলে জেনেছেন। একই তথ্য জানান, পান্নার ভাগনে ও কাউখালীর চিড়াপাড় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েকুজ্জমান মিন্টু।
ইসহাক আলী পান্না ১৯৯৪ সালের সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী সদস্য হয়েছিলেন তিনি।
ইসহাক আলী খান পান্না পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পান্না। পরে ১৪ দলীয় জোটগত নির্বাচনের কারণে সরে যেতে হয় তাকে। পেশাগত জীবনে বীমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারমান ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.