নতুন সংকটে সম্প্রচার গণমাধ্যম: বিজেসি

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় উদ্বিগ্ন সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। তাদের মতে, গত সরকারের শাসনামলে নিপীড়নমূলক আইন ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ, মালিকানার ধরন ইত্যাদি কারণে টেলিভিশন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তৈরির আশা জেগেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা পুরনো উদ্বেগকে নতুন করে হাজির করা হচ্ছে বলে মনে করছে

শনিবার (২৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বিজেসির পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ ও বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রূপাকে সম্প্রতি আটক করার পর তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আটকের দিনও দায়ের করা মামলার এজাহারে তাদের নাম ছিল না। অসংখ্য ‘অজ্ঞাত আসামির মধ্যে তাদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই দুজন সাংবাদিকতার অপব্যবহার বা কোনও দুর্নীতি করে থাকলে তার বিচার হতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অপছন্দের কাউকে ফাঁসাতে গত শাসনামলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত মানবাধিকারবিরোধী হয়রানিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োগ এখনও অব্যাহত রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, শুধু তাই নয়, আদালত প্রাঙ্গণে তারা শারীরিক আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন। রিমান্ড শুনানি চলাকালে তাদের পক্ষের আইনজীবীকে হেনস্তা এবং এজলাস কক্ষে একাত্তর টিভির রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমনকে মারধর করা হয়। সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট), ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ একাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশ ও র‍্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে ৭ জন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে।

সংগঠনটির মতে, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সুযোগে একটি গোষ্ঠী ভিন্ন মত দমনের অপচেষ্টা করে চলেছে, যা সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে নতুন করে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অভ্যুত্থানের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বহু সাংবাদিক হতাহত হন, অথচ বিজয়ের পর থেকে সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ভবনে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, অনেক সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন, মিডিয়া হাউজ দখলের জেরে চাকরি হারাতে হয়েছে অনেককে। এছাড়া সাংবাদিকদের নানারকম মনগড়া তালিকা করে, তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি সাংবাদিক সমাজের মধ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে, যা বর্তমান সরকারের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অঙ্গীকারকে চ্যালেঞ্জ করছে।

দেশের সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রধান সংগঠন বিজেসি এ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশের দাবি জানিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপা যেন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে আইনি সহযোগিতা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে বিজেসি। পাশাপাশি রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যারও দ্রুত বিচার দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.