বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আটক

নানা ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত  বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আটক হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে অন্ধভাবে নানা বক্তব্য দেওয়া এবং যাকেতাকে অপদস্ত করা স্বভাবে পরিণত হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক এই বিচারপতির।

সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তবর্তী দনা এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয় জনসাধারণের হাতে ধরা পড়েন  অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটকের পর তাকে ​​​​​​জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিজিবির নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তখন থেকে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আত্মগোপনে ছিলেন।

আটকের আগে বিচারপতি মানিক জঙ্গলের মধ্যে এভাবে কলাপাতা বিছিয়ে শুয়েছিলেন

কোন মামলায় বিচারপতি মানিককে আটক করা হয়েছে তা জানা যায়নি। গত কয়েকদিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক অনেক মন্ত্রী, আমলা ও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও বিচারপতি মানিককে কোনো মামলায় আসামী করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মানিকের নামে গত সোমবার নোয়াখালীর আদালতে মামলা হয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন। একই অভিযোগে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে আইনজীবী মো. জিয়াউল হক বাদী হয়ে আরেকটি মামলার আবেদন করেন। আদালত অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেছিলেন ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন পাকিস্তানের চর’।

জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ে মিথ্যাচারসহ কালিমা লেপনের হীন উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মানহানিকর বক্তব্য দেন তিনি। যা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। তার এমন মন্তব্যে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আই’র টকশো ‘মেট্রোসেম টু দ্য পয়েন্টে’ জিয়াউর রহমানকে রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।

অন্যদিকে গত জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় চ্যানেল আই-তে প্রচারিত টকশোতে মানিক ঔদ্ধত্য ও কুরুচিপূর্ণ, নারী বিদ্বেষী, অপমানজনক বক্তব্য ও আচরণ করেন। তিনি ওই টকশোর নারী উপস্থাপিকাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন। বিষয়টি সারাদেশের মানুষকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে।

গণআন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ সম্পর্কেও তিনি বাজে মন্ত্য করেন। তিনি দাবি করেন, সাঈদের হাতে অস্ত্র ছিল, তাই পুলিশ গুলি করেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.