ইসলামী ব্যাংকসহ কাউকে বেআইনি সুবিধা দেওয়া হবে না: গভর্নর

ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে বেআইনিভাবে তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আমরা অনিয়মে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে না।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর, নুরুন নাহারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুর্বল ব্যাংকের পর্ষদ’র বিষয়ে গভর্নর বলেন, পর্ষদ ভেঙে দেওয়া প্রক্রিয়াধীন বিষয়।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ৬/৭ মাসের মধ্যে কমে আসবে। মুদ্রানীতি খুব পরিবর্তন না হলেও একটু টাইট করা হবে। মুদ্রাবাজার একটু ভালো অবস্থানে আছে। ডলার ১২৫ টাকায় গেলেও এখন কমে এসেছে। বাজেটে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ রয়েছে সেটা কমিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলবো।

ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিষয়ে একটু সময় নিচ্ছি যাতে সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়। আমরা যাই করি না কেন যারা দোষী তাদের টার্গেট করবো, প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট নয়। আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেব না, তবে ব্যক্তির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ প্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে, অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।

এনপিএল নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেতে চাই। ব্যবসায়ীরা এটা করতে একটু সময় চেয়েছে, তাদের দাবির ফলে প্রভাব পড়বে রপ্তানি-আমদানিতে। আমরা বলেছি এটা নিয়ে আইএমএফ’র সাথে আলোচনা করবো, তবে আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যাবো এতে সন্দেহ নেই।

সরকারি ব্যাংকের অস্থিরতা নিয়ে তিনি বলেন,রাষ্ট্রীয় সোনালী ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অস্থিরতা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এস আলমের গুলোয় দেখেছি কিন্তু সরকারি ব্যাংকে সেটা দেখা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংক ছাড়া ৫ ব্যাংকে ডিপোজিট উঠে যাচ্ছে, বিশেষ করে এসআইবিল থেকে বেশি উঠছে- এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এস আলমের নিয়ন্ত্রণ আছে একাধিক ব্যাংক। সেখানে ডিপোজিট রাখা এবং তোলা গ্রাহকের ব্যাপার। তারা নিরাপদ না মনে করলে আমানত উঠাবে। এখন আমানত উঠিয়ে নিচ্ছেন আমানতকারীরা এ জন্য ব্যাংক মালিকরা দায়ী। আমরা আর কেন সাপোর্ট (তারল্য) দিচ্ছি না। ডিপোজিটরা যদি কোন ব্যাংকের ওপরে আস্থা না রাখে, সেসব ব্যাংক চলতে পারে না। আমরা তাদের উদ্ধার করতে পারবো না। সব সময় উদ্ধার করা ঠিক হবে না। হঠাৎ করে কোন প্রতিষ্ঠন (ব্যাংক) বন্ধ করা বা টাকা দিয়ে তড়িঘড়ি করে উদ্ধার করা ঠিক হবে না। পরে দেখে হয়তো সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো বা একীভূত করবো।

ব্যাংকে গুলির ঘটনায় আহত বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকের অস্থিরতা এক দিনেই হয়নি। এটা নিয়ে কাজ করছি। ব্যাংক কমিশনের বিষয়ে বলেন, এ নিয়ে অল্প দিনে ঘোষণা আসতে পারে। ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের কমিটি হয়েছে, সার্চ কমিটি আছে। ইডিএফ সৎ উদ্দেশ্য করা হয়েছিল তখন আমাদের চাহিদাও কমছিল। এখন সেই পরিবেশ নেই। করপোরেট খাত বলে ডলার লাগবে সেন্ট্রাল ব্যাংকে আসে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো, আমরা ডলার নিয়ে বাজারমুখিতা করার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ কেউ যেনো সরকারের কাছে না আসে। আমরা রিজার্ভের থেকে নির্ভরতা কমাতে কাজ করবো, এটা জিরোতে নামিয়ে আনতে পারলে ভালো।

ব্যবসায়ীদের ঋণ কিস্তি সুবিধার বিষয়ে গভর্নর বলেন, ঋণের কিস্তি সুবিধা চেয়েছে ব্যবসায়ীরা। যদি ১০ থেকে ২০ প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের কারণে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে বিবেচনায় নিতে পারি। এ নিয়ে আমরা কিছু করতেও পারি। তবে ছোট ও মাঝারির ক্ষেত্রে এ সুবিধা হতে পারে, কোন বড় প্রতিষ্ঠান পাবে না।

তিনি আরও বলেন, দুর্বল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের বিবেচনায় আছে। এক হাজার টাকার নোট বাতিলের পরিকল্পনা নেই। নোট বাতিল বিষয়ে এটা নিয়ে গুজব যেনো না হয়।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.