ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরাও। তাঁদের কেউ কেউ সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৬২৬ জন। তবে বর্তমানে ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর।
রবিবার (১৮ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এ সময় প্রাণনাশের শঙ্কায় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিবিধ নাগরিকগণ সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জীবন বিপন্ন ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার-পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ৪ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়প্রাপ্ত ৩ জন তাদের পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সেনা হেফাজতে নেওয়াসংক্রান্ত বিষয়ে গত ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, কারও যদি জীবন বিপন্ন হয়, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে, অবশ্যই আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। তাঁদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, অবশ্যই তাঁরা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ হোক, হামলা হোক। তাঁদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।
এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় এখন পর্যন্ত ছয় আলোচিত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া একজন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাও আছেন। এই ছয় জনের দুজনকে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন আগে বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় আটকে দেওয়া হয়েছে বলে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ভিন্ন স্থান থেকে।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.