পুলিশ ভেরিফিকেশন: ঘুষ চাওয়া এএসআইয়ের দণ্ড বহাল

পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য যাচাইয়ে এক বিচারপতির বাসায় গিয়ে ঘুষ চাওয়ার ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তৎকালীন এএসআই মো. সাদেকুল ইসলামকে বিচারিক আদালতের দেওয়া পৃথক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

শনিবার (১৭ আগস্ট) মামলাটির রায়ের ২৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. তয়েদ উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর-উস সাদিক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এস এম কামাল আমরোহী চৌধুরী।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, নাগরিকদের পাসপোর্টসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয়। এই পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন পেতে নাগরিকদের যথেষ্ট আর্থিক ও মানসিক ভোগান্তি হরহামেশাই পোহাতে হচ্ছে। এই মামলাটি তার একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত সাদেকুল ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি থানার চড়োল গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের দুই মেয়ের পাসপোর্টের তথ্য যাচাইয়ের জন্য তার ধানমন্ডির বাসায় যান। সেখানে তিনি বিচারপতির স্ত্রী ডা. সাবরিনা মোনাজিলিনের কাছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। ডা. সাবরিনা বিষয়টি বুঝতে না পেরে আসামি সাদেকুলকে চা-নাস্তা করার জন্য বকশিস দিতে চাইলেও তিনি তা নিতে অস্বীকার করে বলে যে, দুই হাজার টাকা না দিলে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে না। ডা. সাবরিনা বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে অবস্থানরত তার স্বামীকে জানালে তিনি সাদেকুলকে বাসা ত্যাগ করতে বলেন।

এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন স্পেশাল অফিসার হোসনে আরা শাহবাগ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন। মুলত ওই ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে ছিলেন এসআই সালাম। পরিচয় গোপন করে এএসআই সাদেকুল এসআই সালাম পরিচয়ে ওই ভেরিফিকেশন করতে যান। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৪ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক রাহিলা খাতুন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিচার শেষে ২০১৯ সালের ২১ মার্চ রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের রায় দেন। রায়ে সাদেকুলের আপিল নামঞ্জুর করে দণ্ড বহাল রাখেন। এই রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সাদেকুলকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন ঢাকার নয় নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান।

রায়ে আসামিকে দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারায় এক বছর এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। পরে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন সাদেকুল।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামির আপিল নামঞ্জুর করে ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট রায় দেন একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলেন হাইকোর্ট।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.