একই দিনে বাবা-ছেলের খারাপ খবর
কথায় আছে, বিপদ যখন আসে, তখন নাকি সব একসঙ্গে, চারদিক থেকেই আসে। ক’দিন আগের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ক্ষেত্রে প্রবচনটি একেবারে খেটে গেছে। আজ মঙ্গলবার তিনি নিজে এবং তার একমাত্র ছেলে শায়ান রহমান খারাপ বিষয়ের মুখোমুখী হয়েছেন।
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে ‘আত্মগোপনে থাকা’ সালমান এফ রহমান আজ বিকালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যদিকে আজই বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছেন তার ছেলে শায়ান রহমান। তিনি ব্যাংকটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন।
গত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দেশের ব্যবসায়ী মহলে মুকুটহীন রাজা’র মত ছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ কামালের বন্ধু। ১৯৭৫ সালে বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি শেখ কামালও নিহত হয়েছেন। প্রয়াত ছোট ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে শেখ হাসিনার স্নেহাসিক্ত সালমান এফ রহমান দেশের আর্থিক খাতে হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য একজন ব্যক্তিতে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকলেও তিনি বাস্তবে অর্থমন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারসহ সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজার থেকে নানা কৌশলে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন বলে আভিযোগ আছে। তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বহুগুণ বেড়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটলে রাতারাতি সালমান এফ রহমানের সাম্রাজ্যও ভেঙ্গে পড়ে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই জনমনে প্রশ্ন ছিল সালমান এফ রহমান কী দেশে আছেন, নাকি বিদেশ পালিয়ে গেছেন। গত সপ্তাহে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সালমান এফ রহমান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন এবং তার বিমানে করেই দিল্লী চলে গেছেন। কিন্তু আজ সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাএবকর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, আজ দুপুরে জানা যায়, সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছেন। তাদের মালিকানাধীন এসএস ফ্যাশনস লিমিটেডের নামে জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ায় আইন অনুসারে শায়ানকে পর্ষদ থেকে বাদ হয়েছে।
উল্লেখ, সালমান এফ রহমান এখনো আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। তবে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার কারণে যদি পর পর তিনটি পর্ষদ সভায় উপস্থিত হতে না পারেন, তাহলে তার পরিচালক পদ চলে যাবে। তাতে চেয়ারম্যানের পদও হারাবেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.