দীর্ঘ দিন পর সুসময়ের দেখা পেল দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড (জিপি)। পুঁজিবাজারে টেলিকম খাতের কোম্পানিটির শেয়ার রুদ্ধশ্বাসে দৌঁড়াচ্ছে। ইউনূস রথে চড়ে যেন আকাশ ছুঁতে চাইছে এ কোম্পানি।
গত ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারে। পর থেকে টানা বেড়ে চলেছে ব্লুচিপ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। লেনদেনও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটি লেনদেনে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়।
গত ৬ আগস্ট থেকে টানা বাড়ছে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২৪৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৫৫ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। গত পাঁচ দিনে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।
ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুসারে, মঙ্গলবার গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২১ টাকা ৬০ পয়সা (৮.৭৩%), পরদিন ২৩ টাকা ৫০ পয়সা (৮.৭৪%)। বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম ২৫ টাকা ৫০ পয়সা (৮.৭২%) শতাংশ বেড়েছে। রোববার ডিএসইতে শেয়ারটির দাম ২৭ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার বাজারে বড় দরপতনের দিনেও শেয়ারটি উর্ধমুখী ছিল, যদিও দরবৃদ্ধির হার ছিল আগের চারদিনের চেয়ে কম। এদিন শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সা (২.৮৬%)।
সোমবার ডিএসইতে গ্রামীণফোনের ৩১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার মূল্য ১১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এদিন বাজারে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৪৩ কোটি ২ লাখ টাকা। মোট লেনদেনের দশ ভাগের এক ভাগ (১০.১০%) গ্রামীণফোনের মাধ্যমে। এই লেনদেন নিয়ে কোম্পানিটি লেনদেনে সবার শীর্ষ ওঠে আসে।
ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম ও নরওয়ের টেলিনরের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণফোন মূলতঃ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইলফোন অপারেটরের জায়গাটি দখল করে রেখেছে। কোম্পানিটির ট্র্যাক রেকর্ডও ভাল। এ কারণে কোম্পানির
তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিকূল স্রোতের বিরুদ্ধে চলতে হয়েছে। গ্রামীণব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিরোধের কারণে বিদায়ী আওয়ামীলীগ সরকার সব সময় গ্রামীণফোনের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ড. ইউনূসের প্রতি ক্ষোভ থেকে সরকার বারবার কোম্পানিটির উপর চড়াও হয়েছে। বকেয়া আয়কর দাবি, বকেয়া ভ্যাট দাবি, বিভিন্ন অজুহাতে জরিমানা করা, নতুন সিম ও প্যাকেজ বিক্রি বিক্রি বন্ধ রাখা ইত্যাদি উপায়ে কোম্পানিটির উপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে সরকার। তাতে কোম্পানিটির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। ভবিষ্যতে নিপীড়ন আরও বাড়তে পারে এমন আশংকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়। তাতে অত্যন্ত ভাল মৌলের এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় চারশ টাকা থেকে ২৪০ টাকার কাছাকাছি নেমে আসে।
চলতি মাসে দেশের রাজনীতিতে এক অভাবনীয় ও অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটে। গণঅভ্যত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। আর এ ঘটনার প্রবল বাতাস লাগে গ্রামীণফোনের শেয়ারে। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় হওয়ায় কোম্পানিটিকে আর অযথা হয়রানির মুখে পড়তে হবে না, তাতে কোম্পানির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ঘটবে এমন আশায় বুক বাঁধেন বিনিয়োগকারীরা। উল্টো ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ায় কোম্পানিটির উপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া জরিমানা, বকেয়া করের দাবি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে পারে কোম্পানিটি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.