কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানির মধ্যে দুটির শেয়ারের দাম প্রায় টানা কমছে। কোম্পানি দুটি হচ্ছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড। অন্যদিকে গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দাম আটকে আছে ফ্লোরপ্রাইস তথা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া দামের নিম্নসীমায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত জুন মাসের ২৬ তারিখ হাইকোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই রায়ে ২০২৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনকে বাতিল ঘোষণা করে। ফলে কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হয় কোটা সংস্কারের তুমুল আন্দোলন। সরকারের অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগের কারণে এক পর্যায়ে ওই আন্দোলন শেখ হাসিনার পতনের একদফা আন্দোলনে পরিণত হয়।
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। আর তখন থেকেই এর প্রভাব পড়তে থাকে সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের দুই কোম্পানির শেয়ারে।
ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১০ জুলাইয়ের পর ১৭টি কর্মদিবসের মধ্যে ১৫ দিনই শেয়ারের দর হারিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। দর বেড়েছে মাত্র ২দিন। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১২৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৯৩ টাকা ৪০ পয়সায় নেমেছে। এক মাসে শেয়ারটির দাম কমেছে ২৪.৮৫ শতাংশ।
গত ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তন পরবর্তী প্রতি কর্মদিবসেই শেয়ারের দর হারিয়েছে কোম্পানিটি।
অন্যদিকে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দরপতন শুরু হয় আরও একদিন আগে, ১০ জুলাই থেকে। পরবর্তী ১৮ কর্মদিবসের মধ্যে ১৬দিনই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে। এ সময়ে শেয়ারটির দাম ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৯০ পয়সায় নেমেছে। দাম কমেছে ২৭.৩৪ শতাংশ।
বেক্সিমকো গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দামে অবশ্য আলোচিত সময়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি। দর পতন ঠেকাতে কোম্পানিটির উপর প্রায় দুই বছর ধরে ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করা আছে। ওই দামের নিচে শেয়ার লেনদেন গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাম কমারও সুযোগ নেই।
শুধু শেয়ারের দরপতন নয়, আলোচিত সময়ে কোম্পানিগুলোর লেনদেনর পরিমাণও ছিল একেবারে নগন্য।
বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ অতিমাত্রায় সতর্ক হয়ে যাওয়ায় বেক্সিমকোর শেয়ারের এমন দরপতন হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নিলেও নিতে পারে-এমন ভাবনা থেকে অনেক বিনিয়োগকারী আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন। তাছাড়া আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এমনিতেও সামগ্রিক বাজার ছিল নিম্নমুখী, যার প্রভাব পড়েছে বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোতে।
তাছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের কারণে তার কোম্পানিগুলো রাজনৈতিক অসহযোগিতার মুখে পড়তে পারে বলেও আশংকা আছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি যথেচ্ছভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ব্যবহার করে নানা সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন, যা আগামী দিনে থাকবে না।
এর বাইরেও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দেশের উদ্যোক্তারা ক্ষমতার বাইরে গেলে সরকারের হয়রানির অজুহাত দেখিয়ে কোম্পানির মুনাফা আড়াল করে শেয়ারহোল্ডারদের ঠকিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়েই বিনিয়োগকারীরা বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ সতর্ক।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.