গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় তিনি পদত্যাগ করার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে দু’দিন আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, তার মা পদত্যাগ করেননি। সংবিধান অনুসারে, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
মা শেখ হাসিনা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক। তাদের এই বিপরীত বক্তব্য বড় ধরনের বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কার বক্তব্য সঠিক? আবার জয়ের আগের বক্তব্যের সঙ্গেও নতুন বক্তব্যের মিল নেই।
ঘটনা প্রবাহ ও প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এটা পরিস্কার শেখ হাসিনা স্বজ্ঞানে নিজে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তাহলে হঠাৎ করে জয় কেন ও কিসের ভিত্তিতে দাবি করলেন, তার মা শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি? জয়ের এই দাবি এবং ঘন ঘন অবস্থান বদলের বিষয়টিকে অনেকে রহস্যময় ও উদ্বেগজনক মনে করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, জয়ের নানা বক্তব্যের পেছনে বাইরের কোনো শক্তির প্রভাব থেকে থাকতে পারে। তারা বিভিন্ন রকম বয়ান তৈরি করে জয়ের মুখ দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছেন। এর পেছনে হয়তো তাদের নিজস্ব কোনো এজেন্ডা আছে।
উল্লেখ, প্রথমে কোটা সংস্কার ও পরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনে নাকাল হয়ে ক্ষমতা ছাড়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। গত ৫ আগস্ট দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান। তিনি প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেন। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। তবে রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে, গোপন আস্তানায়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্ট দুপুরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর পর সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
পদত্যাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেননি। তবে গতকাল শনিবার তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন বলে এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্যা প্রিন্ট। পত্রিকাটি দাবি করেছে, ওই বার্তাটি তারা দেখতে পেয়েছে।
বার্তায় শেখ হাসিনা তার পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তার কারণও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, লাশের মিছিল যাতে দেখতে না হয়, সে জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন। তারা শিক্ষার্থীদের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। তিনি তা হতে দেননি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি দেশে থাকলে হয়তো আরও প্রাণহানি হতো। আরও অনেক সম্পদহানি হতো।
তিনি দাবি করেন, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিগুলোর হাত রয়েছে।
অথচ গত শুক্রবার মধ্যরাতে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, তার মা শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সাংবাধানিকভাবে তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জয় আরও বলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
অথচ শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিনই আওয়ামীলীগের ফেসবুক পেজে পোষ্ট করা এক ভিডিও বার্তায় জয় বলেন, ঠিক আছে, শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে, তা আমার চিন্তার বিষয় না, আমাদের পরিবারেরও চিন্তার বিষয় না। আপনারা বুঝবেন।
সেদিন এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। বঙ্গবন্ধু পরিবারই আর রাজনীতিতে থাকবে না।
পরবর্তীতে অন্য একটি গণমাধ্যমকে জয় বলেন, তিনি রাজনীতিতে আসবেন। আওয়ামীলীগের হাল ধরবেন। সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোসণা করা হলে শেখ হাসিনাও দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.