সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বড় পরিবর্তন শুরু হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার পর হঠাৎ ইসলামী ব্যাংক থেকে বিদায় নিচ্ছেন এস আলম গ্রুপের নিয়োগপ্রাপ্তরা। এরইমধ্যে শীর্ষ পদে থাকা অন্তত চার জন কর্মকর্তাকে ব্যাংক থেকে চলে যেতে হচ্ছে।
এদিকে আজও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক পিএলসির কমচারীরা। এ সময় রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে কয়েকজনকে মারধর করে বের করে দিতে দেখা গেছে।
এর আগে ব্যাংকের আরেক ডিএমডি রেজাউর রহমানকে মারধর করেছে আইবিবিএলের লোকজন। এছাড়া এস আলমের ‘বিশেষ কৃপায়’ প্রমোশন পাওয়া আরও অন্তত চার-পাঁচ জনকে মারধর করেছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।
আন্দোলনরত কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকটির পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তাদের জন্য বিআরপিডি সার্কুলার নং ২ ও ৫ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সকল বৈষম্য দূরীকরণ ও হাইকোর্টের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আজকের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ঢাকার মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি ছিলো, গত ১৫ বছর ধরে তারা ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এদিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে যাদের জোর করে ও বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের আবার ফেরার সুযোগ দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী সব প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে চাকরিচ্যুতদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে ফেরানোর জন্য আদেশ জারি করেছে ব্যাংকটির প্রশাসন।
জারি করা আদেশে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন (আইবিএফ) এবং আইবিএফ কর্তৃক পরিচালিত সব প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্বেচ্ছায়/জোরপূর্বক/বাধ্যতামূলকভাবে যেসব জনবলকে অব্যাহতি প্রদান, অথবা গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের সবার বরাবর পাঠানো পত্র বাতিল করা হলো। অর্থাৎ তাদের ওই তারিখ থেকে পুনর্বহাল করা হলো। অনতিবিলম্বে এই ব্যক্তিদের চিঠি ইস্যু করে কাজে যোগদানের জন্য অবহিত করা হবে।
এই আদেশে সই করেছেন ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালগুলোর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ আলী।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তনের পর গত সাত বছরে অনেক কর্মকর্তাকে জোরপূর্বক চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক জুনিয়র কর্মকর্তাকে সিনিয়র পদে বসানো হয়। এছাড়া ব্যাংকটি থেকে বড় অঙ্কের অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে বলে মালিকদের একটি পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংক খোলার প্রথম দিনেই বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা শুরু হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর দিলকুশায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কর্নার ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ কিছু কর্মকর্তা। পাশাপাশি মানবসম্পদ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাকে মারধরও করা হয়েছে।
দেশে শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সবচেয়ে বড়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির পর্ষদে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই ছিলেন। তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নীতিনির্ধারক পদে নিয়োগ দেওয়া হতো। নির্বাহী ও নিচের পর্যায়েও ওই ঘরানার জনশক্তিই বেশি। ফলে ব্যাংকটি পরিচালিত হতো জামায়াতের আদর্শ নিয়ে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচেষ্টায় ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক। এর স্লোগান ছিল ‘কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার পথপ্রদর্শক’। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পসহ রফতানিমুখী শিল্প এবং দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের মতো নতুন নতুন খাতে ব্যাংকটি আর্থিক সেবার দুয়ার খুলেছিল। বিভিন্ন স্থানীয় শিল্প ও এসএমই দাঁড়িয়েছে ইসলামী ব্যাংকের ঋণের ওপর। প্রতিষ্ঠাকালে এই বেসরকারি ব্যাংকের ৭০ শতাংশ পুঁজি জোগান দিয়েছিলেন বিদেশিরা। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটিকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর অনেকটা ঝুঁকিতে পড়েছে।
অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.