সদ্য সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ডান হাত হিসেবে পরিচিত বালুখেকো সেলিম খান গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। জনতা তার ছেলে চলচ্চিত্র অভিনেতা শান্ত খানকেও পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরে নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে তারা প্রথম জনরোষে পড়েন। তবে নিজের পিস্তল থেকে একাধিক গুলি ছুঁড়ে কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তারা। কিন্তু পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে আবার জনতার মুখোমুখি হলে সেখান থেকে আর বের হতে পারেননি। সেখানেই জনতার পিটুনিতে নিহত হয় সেলিম খান ও তার ছেলে শান্ত খান।
সেলিম খান চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নং লক্ষীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেলিম খান চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে শতাধিক ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। এ সব ঘটনায় সে জেলখাটে, দুদকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রশ্রয়ে ও তার ভাই ডা. ওয়াদুদ টিপুর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেলিম খান মেঘনা নদী থেকে দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছেন। গত ১০ বছরে তিন শতাধিক ড্রেজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
গত বছর ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল—এই চার বছরেই দীপু মনির নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার ২১টি মৌজা থেকে ৬৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ঘনফুটের বেশি বালু তুলেছেন সেলিম খান।
বর্তমানে প্রতি সিএফটি সাদা বালুর পাইকারি দর দুই টাকা। এই হারে গত চার বছরে তিনি যে পরিমাণ বালু তুলেছেন তার মূল্য প্রায় এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। কিন্তু বালু ব্যবসা থেকে হাজারো কোটি টাকা আয় করলেও সরকারি কোষাগারে এক পয়সাও দেননি সেলিম খান।
২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দীপু মনি কয়েকটি সরকারি দপ্তরে অন্তত ১৫টি আধা সরকারি লেটার বা ডিও লেটার লিখেছেন, যাতে সেলিম খান ও তার পরিবারের সদস্যরা বালুর ব্যবসা চালিয়ে যেতে এবং ব্যবসা আরও বৃদ্ধি করতে পারেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর ২০২৩ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে সেলিম খান ও ডাঃ দীপু মনির যোগসাজসের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী নদী দখলে সহায়তা করেন। তার এই অভিযোগের কয়েক দিনের মধ্যে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এক সময়ের রিক্সা চালক সেলিম খান দীপু মনির পৃষ্ঠপোষকতায় একদিকে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ তিনি চলচ্চিত্র ব্যবসা বিনিয়োগ করেন। গড়ে তোলেন শাপলা মিডিয়া নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.