খুলনায় কর্মসূচী: ছবি দেখে প্রত্যেক ছাত্রকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহুত বুধবারের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনকালে খুলনায় আলোন্দনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে এ সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।

এদিকে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ছবি তুলে রাখার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। এ সময় তিনি বলেন, ছবি দেখে সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তখনও কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। সংঘর্ষ শুরু হয়নি। তবু তিনি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের কথা বলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে আজ বুধবার সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচী অনুসারে, আজ সকালে খুলনার রয়েল মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে চাইলে পুলিশের বাধায় তারা অবস্থান নিতে পারেনি। এ সময় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশ কম ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করে।

পরে ধীরে ধীরে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে বেলা একটার দিকে তারা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পরে খুলনার পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক নগরীর শিববাড়ি এলাকায় পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রম দেখতে আসেন। এ সময় মাত্র শ’খানেক শিক্ষার্থী কর্মসূচি পালন করা সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়া উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন।

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সহকর্মীদের প্রতি উষ্মা দেখিয়ে বলছেন, মাত্র ১০০ ছেলে এসে ঝামেলা করছে। বাংলাদেশের কোথাও নাই। এরপর অন্য সহকর্মীদের দিকে ঘুরে তিনি আবার মলেন, মাত্র ১০০ ছেলে। এটা কোনো কথা হল নাকি। এ সময় পাশে থেকে একজন কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে ২০/২৫ ছিল। এর জবাবে তিনি বলেন, ২০/২৫ জন হলে গ্রেপ্তার করলা না কেন। এটা কোনো কথা হল। এ সময় তিনি অন্য দু’জন কর্মকর্তাকে বলেন, ২০/২৫ জন ছিল, তাহলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গাড়ি তুললা না কেন। পরক্ষণেই তিনি তাদেরকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছবি তোলার নির্দেশ দেন। বলেন, ছবি দেখে সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হকের নির্দেশে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ একশনে যায়। প্রথমে তারা শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বলে। জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তারা দূর থেকে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়ে। এসময় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ ২০–২৫ জন আহত হয়। পরে সংঘর্ষ নগরীর রয়েল মোড়, পিটিআই মোড়, শান্তিধাম, পিকচার প্যালেস ও টুটপাড়া কবরখানা মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ছবি তুলে সবাইকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ সংক্রান্ত ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হক তার ফেসবুক একাউন্টটি ডি-অ্যাক্টিভেট করে ফেলেন। রাত ১০টায় এ নিউজ লেখার সময় সেটি ডি-অ্যাক্টিভেট দেখা গেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.