ইচ্ছামতো টাকা ছাপানোয় দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তিতে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ। কিন্তু টানা ১৫ মাস ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য অতিরিক্ত টাকা ছাপানোকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুন নাগাদ যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তার মধ্যে অনেকগুলোই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে লক্ষ্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি টাকা ছাপানো ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে প্রায় লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়েছে মুদ্রানীতি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতি পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু গত জুনে অর্থবছরের শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এদিকে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ জন্য ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়া বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অপরদিকে দেশে এখনো মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকারও সংকট চলছে, রিজার্ভ নিয়েও টানাটানি রয়েছে। তবে ডলারের দামে ছাড় দেওয়ায় প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়ছে। রপ্তানি হিসাবে গরমিলের তথ্য ঠিক করায় লেনদেনের ভারসাম্যে চলতি হিসাব ঘাটতিতে চলে গেছে। তবে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে কোনো ফল আসছে না। আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ব্যর্থতা ও সফলতা তুলে ধরলেও এবার তা করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফলে সংস্থাটির ব্যর্থতার ব্যাখ্যা জানা যাচ্ছে না।

ওয়েবসাইটে দেওয়া মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা গত জুন পর্যন্ত একই ছিল। তবে সরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্য ১৪ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও গত জুন পর্যন্ত তা ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এ জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের মোট প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুনে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক ও প্রচলিত ধারার কয়েকটি ব্যাংককে ধার দেয়। এতে জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা আগামী ডিসেম্বরে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও গত জুন পর্যন্ত রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ঋণাত্মক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নতুন মুদ্রানীতিতে প্রকৃত বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ, গত জুনে যা ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ও বিদেশফেরতদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব খোলা ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ কমবে ও রিজার্ভ বাড়বে।

নতুন মুদ্রানীতিতে প্রতিটি মার্কিন ডলারের দাম ১১৭ টাকায় রাখার ঘোষণা দিয়ে ভবিষ্যতে তা বাজারভিত্তিক করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.