এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ

গত এক যুগের মধ্যে এক বছর ধরে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। যে হারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় বাড়ছে না। আয়ের চেয়ে খরচের গতি বেশি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো বছরে কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। অন্যদিকে জাতীয় মজুরি হার বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের মতো।

এক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি খারাপ অবস্থায় ছিল। গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা অর্থবছরের সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্য থাকলেও এর ধারেকাছে নেই।

এদিকে গত কয়েক দিনের সৃষ্ট সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাজারে চাল, ব্রয়লার মুরগি, মুরগির ডিম, মাছ-মাংস, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। অবশ্য গত দুই দিনে শাকসবজির দাম কিছুটা কমেছে।

তবে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বলছেন, বাজার এখনো গরম। দাম এখনো আগের পর্যায়ে আসেনি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, শেওড়াপাড়া ও কারওয়ান বাজার দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যেমন গতকাল মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে খুচরা পর্যায়ে এক কেজি মোটা চাল (পাইজাম) বিক্রি হয় ৫৪ টাকায়। এই চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৫১ টাকা।

রাজধানীর চালের বৃহত্তম পাইকারি আড়ত মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, সংঘাতের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় শুক্রবার থেকে গতকাল পর্যন্ত সেখানে কোনো চালের ট্রাক আসেনি। তবে পাইকারি পর্যায়ে চালের মজুত থাকায় সেখানে দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কৃষি মার্কেটের বেঙ্গল রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মো. নাজিম উদ্দিন আশা করেন, খুচরা বাজারে সরবরাহ বাড়লে চালের দাম কমে আসবে।

চাল ছাড়াও অন্য নিত্যসামগ্রী যেমন চিনি, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি, মুরগির ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। গতকাল ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। মাত্র দুই দিন আগে চিনির দর কেজিতে ৫-১০ টাকা কম ছিল। বাজারে এখন ১১০-১২০ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কমার কোনো সুখবর নেই।

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন ১৯০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দামও ডজনে ১০-২০ টাকা বেড়ে এখন ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজির দাম এখন ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মাছের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক দিনে সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম বাড়তি আছে। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশ ও চিংড়ি মাছ বেশি খায়। এসব মাছের দাম স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কেজিতে ২০-৪০ টাকা বাড়তি।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.