কোটা আন্দোলনজনিত বিশেষ পরিস্থিতিতে টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর দেশে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। আজ (২৩ জুলাই) রাত নয়টার দিকে মূলত এ সেবা চালু করা হয়।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে জানান।
তবে আজ শুধুই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এখনো বন্ধ আছে। এ সেবা কবে নাগাদ চালু হবে তাও পরিস্কার নয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে মোবাইল ইন্টারন্টে নেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হলেও তাতে আপাতত ফেসবুক, টুইটার (এক্স)সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা যাবে না। বন্ধ থাকবে ইউটিউব এবং টিকটকের মতো ভিডিও কনটেন্টভিত্তিক মাধ্যমও।
এদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও শুরুতে সবাই ইন্টারনেট পাচ্ছেন না; জরুরি সেবা, আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমসহ কিছু খাতকে প্রাধান্য দিয়ে ইন্টারনেট চালু হচ্ছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকে এরই মধ্যে এই সেবা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চালু হবে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ও কূটনৈতিক এলাকায় ইন্টারনেট চালু হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত, রপ্তানিমুখী শিল্প খাত, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও হাসপাতালের মতো জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে, প্রবাসীকল্যাণ সেবা এবং এয়ারলাইনস সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকা এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। এরপর এলাকার পরিধি বাড়ানো হবে। খুব দ্রুত সার্বিকভাবে পুরো ইন্টারনেট সেবা চালু হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালুর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়টি এখনো আমি নিশ্চিত বলতে পারছি না যে কতটুকু আমরা আসলে অ্যালাউ (অনুমোদন) করতে পারব। এ পর্যায়ে ইন্টারনেটকে আগে পুনঃস্থাপন করি। আগামীকাল (আজ বুধবার) বলি, পরের অবস্থান কী।’
কারও যদি অগ্রাধিকার এলাকার প্রস্তাব থাকে, তাহলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানালে এবং সেটা যৌক্তিক মনে হলে ইন্টারনেট দেওয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ।
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হলে ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ হিসেবে ১৮ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় একদল তরুণ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন। আরেক অপারেটর রবির একটি গ্রাহক সেবা কেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ভাঙচুর করা হয়। তখন অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইন্টারনেট চালুর ক্ষেত্রে সরকারের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে সরকার ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত ডেটা সেন্টারে আগুন দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনছিল। ডাটা সেন্টারের ক্ষতি এবং বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীরা তার কেটে দেওয়ায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে ইন্টারনেট সেবাদাতা একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আইআইজিগুলো ডাটা আপ না করার কারণে ইন্টারন্টে চালু করা যাচ্ছে না। ডাটা সেন্টারের ক্ষতি বা তার কাটা পড়া এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা নয়।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.