কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সংঘাতে ৬টি তরুণের প্রাণ ঝরেছে। সন্তানহারা মায়েদের বিলাপে ভারি হয় উঠেছে আকাশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন। এই আহত-নিহতদের বড় অংশই কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমর্থক। মূলত: পুলিশ এবং ছাত্রলীগের বর্বর হামলায় এই নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও ছাত্রলীগের প্রশ্রয়ে তাদের সহযোগী হিসেবে বহিরাগতরাও মাঠে নেমেছে। নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে। একাধিক জাতীয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে এসব খবর উঠে এসেছে।
পরিস্থিতি অনেক নাজুক হয়ে উঠায় সরকার ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ও গাজীপুরে বিজিবি মোতায়েন করেছে। দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যখন পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা করা হচ্ছে, তখন আগুনে ঢি ঢালতে বসেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, লালন করি, বিশ্বাস করি, সেই চেতনায় বিশ্বাসীরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।’ (আজকের পত্রিকা)।
হঠাৎ এই প্রস্তুতির আহ্বান কেন? কিসের প্রস্তুতি? দেশে কী কোনো গৃহযুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে, ওবায়দুল কাদের কী তার আভাস পেয়েছেন?
কিন্তু দেশে তো এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। চলমান আন্দোলনের তো একটাই দাবি, কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ।আন্দোলনকারীরা তো একবারের জন্যেও সরকার পতনের কথা বলেনি। বরং বর্তমান সরকারের কাছেই তো কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে তারা। সরকারকে অস্বীকার করলে তো তাদের কাছে এ দাবি জানানো হতো না।
কোটা আন্দোলনকারীরা একবারের জন্যেও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়নি। তাহলে তাদেরকে কেন সরকার, আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখী দাঁড় করানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন ওবায়দুল কাদেররা?
তবে হ্যাঁ, মঙ্গলবার রাত থেকে দেখা যাচ্ছে, কোটা আন্দোলনকারী এবং তাদের পাশাপাশি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও তাদের ক্ক্ষ ভাংচুর করে বিছানাপত্র নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা নিন্দনীয়। কিন্তু কেন ঘটল এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা? সোমবার পর্যন্ত তো কোটা আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের প্রতি এমন মারমুখী ছিল না, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে সামান্য শ্লোগানও দেয়নি। একটা গণতান্ত্রিক আবহে যার যার পরিধির মধ্যে অবস্থান করছিল আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ।
কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগকে মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেওয়ার দায় খোদ ওবায়দুল কাদেরকে নিতে হবে।
কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগকে মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেওয়ার দায় খোদ ওবায়দুল কাদেরকে নিতে হবে। গত সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গতকাল রোববার রাতে ক্যাম্পাসে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হয়েছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।’ তার এই বক্তব্যের পরদিন ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলনকারী নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে। তাতে তিনশ’র বেশি ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। হাসপাপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় তাদের উপর হামলা চালানো হয়।
এমন বর্বর ঘটনার পরও ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার বা আওয়ামীলীগ। তার পরিণামে মঙ্গলবার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। খালি হয় ছয়জন মায়ের কোল।
দেশে আইনের শাসন থাকলে মঙ্গলবারের ৬টি প্রাণহানির ঘটনায় যে মামলা হতো, তাতে নিশ্চিতভাবে ওবায়দুল কাদের হতেন হুকুমের আসামী। ‘ছাত্রলীগ প্রস্তুত’- ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের অর্থ হতে পারে তিনি বা তারা ছাত্রলীগকে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হবার নির্দেশ দিয়েছেন অথবা ছাত্রলীগ যে হামলা করবে সেটা ওবায়দুল কাদের আগে থেকেই জানতেন।
দেশে আইনের শাসন থাকলে মঙ্গলবারের ৬টি প্রাণহানির ঘটনায় ওবায়দুল কাদের হতেন হুকুমের আসামী
আগের বক্তব্যের পর এমন একটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, ঝরে পড়েছে ৬টি তাজা প্রাণ। তাতে ওবায়দুল কাদেরদের এতটুকু অনুতাপ, অনুশোছনা নেই। বরং নতুন করে হুংকার দিচ্ছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি দুর্ভাগ্যজনক। হতাশার। একজন প্রবীণ এবং তৃণমূল থেকে ওঠে আসা রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আগ্রাসী বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করা যায় না। সিনিয়র নেতাদের কাছে মানুষ প্রজ্ঞা, সহনশীলতা ও উদারতা আশা করে।
ধরে নিলাম তিনি আশংকা করছেন, চলমান আন্দোলন বিপথগামী হতে পারে, এটি আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে, জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তো পুলিশ বাহিনী আছে। আছে বর্ডার গার্ডসহ অন্যান্য সংস্থা। আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগকে কেন সরাসরি মোকাবেলা করতে হবে? আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী কি অক্ষম? নাকি তাদের উপর আওয়ামীলীগ ও সরকারের আস্থা নেই। তাহলে তো বলতে হবে, দেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ দেশ তো ব্যর্থ হতে পারে না। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিশ্চয় এমন একটি দেশের জন্য তার জীবন বাজী রাখেন নি।
সরকার ও রাষ্ট্রের কাজ তো জাতির মধ্যে বিভেদ বাড়ানো নয়। সংঘাত ও অরাজকতাকে উস্কে দেওয়া নয়। সরকার চাইলে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমাধান করতে পারতো। ছাত্রলীগকে মাঠে না নামিয়ে আন্দোলনের নেতাদের আলোচনার টেবিলে আনা যেতো। কিন্তু আলোচনার সামান্যতম উদ্যোগও চোখে পড়েনি। সম্ভবত: সরকারের ইগো কাজ করেছে। তাচ্ছিল্যও ছিল। সরকারের লোকজন হয়ত ভেবেছে, হাতি-ঘোড়া গেল তল, গাধা বলে কত জল।
রোববার রাতের যে শ্লোগানকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীদের আচরণকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাবি করে তা মোকাবেলায় ছাত্রলীগ প্রস্তুত বলা হয়েছে, ওই শ্লোগানেরও ভুল ইন্টারপ্রিটেশন করা হয়েছে। অবশ্য আন্দোলনকারীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ইন্টারপ্রিটেশন করেছেন। রোববার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা পাবে। তাঁর এই বক্তব্যে মোটেও আন্দোলনকারীদেরকে রাজাকার বা রাজাকারের নাতি-নাতনি বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। স্পষ্টত আন্দোলনকারীরা এর ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। অথবা সুযোগ সন্ধানী কেউ তাদের মগজে ভুল ব্যাখ্যা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই তারা বিদ্রুপ করে নিজের রাজাকার বলেছেন। নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরে তারা পরে আবার ওই শ্লোগান থেকে সরেও এসেছেন। ওবায়দুল কাদের ও আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে তা বুঝেন, কিন্তু আন্দোলনকারীরা যে আমরা রাজাকার বলে স্রেফ বিদ্রুপ করেছেন সেটা বুঝেন না, অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করেন।
যা হবার হয়ে গেছে। সরকারের আর মোটেও কালক্ষেপনের সুযোগ নেই। তাদের উচিত, শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসা। আন্দোলনকে তাচ্ছিল্য করা বা ইগো দেখানো কোনোভাবেই উচিত হবে না। যে কোনো সরকারের দায়িত্ব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া; তাদের কর্মকাণ্ডে জাতির মধ্যে বিভক্তি না বাড়ে, সংঘাত উস্কে না যায় তা খেয়াল রাখা।
সরকার যদি শান্তিপূর্ণ পথে না গিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে এর অবসান ঘটাতে চান, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশংকা আছে
এখনো এই আন্দোলন কোটা বিরোধী আন্দোলনেই সীমিত আছে। কিন্তু সরকার যদি শান্তিপূর্ণ পথে না গিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে এর অবসান ঘটাতে চান, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশংকা আছে। কারণ তাতে আন্দোলনকারীদের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আরও বাড়তে থাকবে। কোনো এক পর্যায়ে তারা ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন। কারণ এই ছাত্ররা কোনো না কোনো পিতার সন্তান। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অনেক কষ্টে, অভাব-অনটনের মধ্যে থেকে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন এই আশায় যে, তারা এক সময় চাকরি-বাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে। কোটা ব্যবস্থার কারণে যদি সন্তানের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, তাহলে সে ব্যবস্থা বাতিলের আন্দোলনে তাদের সমর্থন না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দুর্বিষহ জীবন পার করছে মানুষ। তারা দেখছে, কিছু মানুষ সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটতরাজের মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে, সরকার ও রাষ্ট্র তাদেরকে দৃশ্যত এক ধরনের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে খেটে খাওয়া মানুষ হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও সন্তানের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতে পারছে না। এমন অবস্থায় মানুষের মনে হতাশা ও ক্ষোভের বাস্প জমছে। এই পুঁঞ্জিভুত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটলে কোটা আন্দোলনের ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যেতে পারে। আবার তৃতীয় কোনো পক্ষ বা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠি এটিকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতির অবনতির ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে।
গণমানুষকে ক্ষমতা দিয়ে, পুলিশ দিয়ে অনেক দিন হয়তো দমিয়ে রাখা যায়। কিন্তু চির দিন যায় না। সাধারণরা ক্ষেপে গেলে কেমন অসাধারণ আর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে, তা তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবার মোটা দাগে দেখা গেছে। তিনদিন আগেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগ নেতাদের আঙ্গুলের ইশারাই ছিল সেখানকার আইন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তাদেরকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। কোনো কোনো বিশ্বাবিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতারা নিজ থেকে পালিয়ে গেছেন। এটি হচ্ছে সাধারণ মানুষের সম্মিলিত শক্তির একটি বড় উদাহরণ। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সমাধানের পথে এগুনো হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নইলে তা শুধু দেশের জন্য নয়, সরকার এবং আওয়ামীলীগের জন্যেও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আর কোটা ইস্যুটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের সাথে জড়ানোর বিষয়টিও অতিসরলীকরণ মনে করি। সংবিধানে অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য কোটার কথা বলা আছে। মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতি বা পরবর্তী প্রজন্ম কোনোভাবেই অনগ্রসর শ্রেণীর মধ্যে পড়েন না। তাই এই কোটা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা তো পাকিস্তানি বৈষম্যের অবসান ও সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। কোটা তো সমান অধিকারের কথা বলে না। তাই কোটার পরিবর্তে কীভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের সম্মানিত করা যায়, আর্থিক সমর্থন দেওয়া যায় সে বিষয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে।
নারী এবং জেলা কোটা যে বাস্তবতার আলোকে রাখা হয়েছিল, সে বাস্তবতাও বদলে গেছে অনেকটা। একটা সময় দেশের অনেক অঞ্চল শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নয়ন ইত্যাদি দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। তাই বিভিন্ন জেলার মধ্যে বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে কোটার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্বাধীন দেশে সরকারের নানামুখী চেষ্টায় ওই বৈষম্য অনেকটাই কমে এসেছে। একই অবস্থা নারীদের ক্ষেত্রেও। একসময় পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন মেয়াদে আওয়ামীলীগ সরকার নারী শিক্ষায় বিপ্লব এনেছে। নারী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ, তাদের জন্য বৃত্তি চালু করা ইত্যাদির কল্যাণে নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। তাই আদিবাসী ও প্রতিবন্ধি ছাড়া অন্য কারো জন্য কোটা রাখা আগের মতো আর জরুরী নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত অর্থনীতির দেশে উন্নীত করার যে লক্ষ্য ঠিক করেছেন, তা অর্জন করার জন্য জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরী। এমনিতেই নানা কারণে দেশের অর্থনীতি অনেক চাপে আছে। তার উপর যদি জাতির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়, সংঘাত-সহিংসতা দেখা দেয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম নেয়-তাহলে কোনোভাবেই উন্নীত দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণ হবে না। বরং অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণই দুরুহ হয়ে পড়বে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পাশাপাশি সরকারের উচিত, আলোচিত ৬ হত্যাকাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। ছাত্রদের ওপর চালানো ছাত্রলীগের হামলার পেছনে ওবায়দুল কাদেরের কোনো যোগসূত্র আছে কি-না বা তার বক্তব্য ছাত্রলীগকে উস্কানি দিয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা। তার কোনো দায় পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ তার ওই বেফাঁস ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য পরিস্থিতিকে শুধু নাজুকই করেনি, সরকারকেও বড় ধরনের অস্বস্তিতে ফেলেছে। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পরবর্তীতে যাতে কোনো প্রতিশোধ না নেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরাও যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে আশা করি, যাতে তৃতীয় কোনো পক্ষ এসে হীন স্বার্থে আন্দোলনকে বিপথগামী করতে না পারে। মনে রাখতে হবে, সংঘাত-নৈরাজ্য বাড়লে কারো জন্য তা মঙ্গলজনক হবে না। যে চাকরির কোটার জন্য তারা আন্দোলন করছেন, ওই চাকরির সুযোগই তখন কমে আসবে।
#জিয়াউর রহমান, সম্পাদক, অর্থসূচক।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.