সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি রাষ্ট্রপতি বরাবর তুলে ধরতে বঙ্গভবনের উদ্দেশে গণপদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু করে শাহবাগ-মৎস্য ভবন হয়ে স্বাভাবিকভাবে কোন বাধা ছাড়া এগাতে পারলেও, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশের ব্যারিকেডের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে তারা দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী তাঁরা গণপদযাত্রা করে বঙ্গভবন অভিমুখে যাবেন। দাবির বিষয়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন। আজ তাদের কর্মসূচি সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করতে চান। সে জন্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে মাইকিং করে বলা হচ্ছে, তারা যেন কোনও ঝামেলার মধ্যে না জড়ান।
গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। এদিকে পুরান ঢাকা হয়ে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা শুরু করেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে দিয়ে জজ কোর্ট এলাকা হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়, তাঁতিবাজার মোড় হয়ে জিরো পয়েন্ট মোড়ে এসে মূল মিছিলে যুক্ত হয়েছেন তারা।
এ ছাড়া ঢাকায় এই কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরাবর গণপদযাত্রা করবেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাঁরা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।
গতকাল সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে নাম উল্লেখ না করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, প্রধান মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পর সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থা বাতিল করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। গত ৫ জুন রায় ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বাধা দূর হয়। ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আবেদন করেন। এরপর গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.