আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন কোহলি-রোহিত

টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন রোহিত। ২০০৭ সালেও একই শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। তবে রোহিতের কাছে এবারের বিশ্বকাপটা একটু আলাদা। অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির সবশেষ দুই টুর্নামেন্টে হারার পর অবশেষে উঁচিয়ে ধরলেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার একটু পরই সংবাদ সম্মেলন করে গেছেন সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। রোহিত অবশ্য এলেন একটু দেরিতে। এতদিন পর শিরোপা জেতার অনুভূতি, দলের পারফরম্যান্সের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিকেটারকে আলাদা আলাদা উত্তর দিলেন ভারতের অধিনায়ক।

ফাইনালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে নিজের বিদায়ের কথা জানিয়েছেন কোহলি। তার আধ ঘণ্টা পর রোহিত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে এসে। কোহলির মতো করে ভারতের অধিনায়কও বলে গেলেন জাতীয় দলের হয়ে এটাই তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবসর নিয়ে রোহিত বলেন, ‘এটাই আমার শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। এই সংস্করণকে বিদায় বলার জন্য এটার চেয়ে ভালো সময় হতে পারে না। প্রতিটা মুহূর্তই আমি উপভোগ করেছি। এই সংস্করণ দিয়েই ভারতের হয়ে আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলাম। এটা এমন কিছু যা আমি চাইতাম।

কোন সময় নিজের অবসর নেয়ার কথা ভেবেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতের অধিনায়ক বলেন, ‘সবসময় আমি শিরোপাটা জিততে চেয়েছি। সত্যি বলতে আমি খুব করে চেয়েছি। এটাকে আসলে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার জন্য এটা খুবই আবেগঘন একটা মুহূর্ত ছিল। আমার জীবনে এই ট্রফিটার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলাম। অবশেষে জিততে পারায় খুবই খুশি।’

২০০৭ সালে ডারবানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল রোহিতের। এরপর ১৭ বছরে খেলেছেন ৯টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে ভারতের জার্সিতে ১৫৯ ম্যাচে করেছেন ৪ হাজার ২৩১ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার চেয়ে বেশি রান নেই আর কারও। ৩২.০৫ গড় ও ১৪০.৮৯ স্ট্রাইক রেটে রান করা রোহিত ৫ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ৩২ হাফ সেঞ্চুরি।

এদিকে মুখ ফুটে কেউ না বললেও অনেকের মনে হয়ত তখন এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল কোহলি টি-টোয়েন্টি ছাড়বেন কবে। এমন পরিস্থিতিতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালের আগে রোহিত শর্মা জানালেন, কোহলি হয়ত সবটা ফাইনালের জন্য জমা রেখেছেন। একই সুরে কথা বলেছেন প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও। শেষ পর্যন্ত তাদের দুজনের কথাই সত্যি হয়েছে। ১৭ বছর পর ভারতের জেতা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার খেলেছেন ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস।

আর্শদীপ সিং, জসপ্রিত বুমরাহ ও হার্দিক পান্ডিয়ার ডেথ ওভারে মাষ্টারক্লাস বোলিংয়ের পরও ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে উঠেছে কোহলি। ফাইনাল সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে নিশ্চিত করলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার কথা। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন এটাই আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বলে।

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে কোহলি বলেন, ‘এটা আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এটি আমরা অর্জন করতে চেয়েছি। একদিন আপনার মনে হবে রানই করতে পারছেন না, তারপরে কিছু ঘটবে। ঈশ্বর মহান। এবং যে দিন গুরুত্বপূর্ণ, আমি দলের কাজটি করেছি। এখন অথবা কখনোই নয়-ভারতের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি-সবটুকু কাজে লাগাতে চেয়েছি।’

সঞ্চালক হার্শা ভোগলে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন আরও একটু। কোহলি তাতে যোগ করলেন এভাবে, ‘ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে চেয়েছি। পরিস্থিতিকে সম্মান জানাতে চেয়েছি জোর করার চেয়ে। এটা (অবসর) “ওপেন সিক্রেট” ছিল, এখন পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেওয়ার পালা। দুর্দান্ত কিছু খেলোয়াড় দলকে এগিয়ে নেবে এবং পতাকা উঁচু করে ধরবে।’

২০১০ সালের জুনে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল কোহলি। ১৪ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ১২৫ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪৮.৬৮ গড় ও ১৩৭.০৪ স্ট্রাইক রেটে ৪ হাজার ১৮৮ রান করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। একটা সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩৮টা হাফ সেঞ্চুরি আছে কোহলির। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও আইপিএলে খেলবেন তিনি।

অথসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.