ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে উঠেই ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোন আসরে এবারই প্রথম তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। যদিও শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের দেয়া ১১৬ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারের মাঝে জিততে পারলেই প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে যেতে পারত বাংলাদেশ। অথচ সেই ম্যাচটা টাইগাররা হেরেছে ৮ রানে।
সংবাদ সম্মেলনে এসে শান্ত বলেছেন, ‘আমাদের বোলিং খুব ভালো হয়েছে। এমন বোলিংয়ের পর আমাদের জেতা উচিত ছিল। কিন্তু ব্যাটিংয়ে অনেক বাজে সিদ্ধান্তের কারণে হেরে গেছি আমরা। পরিকল্পনাটা এমন ছিল যে আমরা প্রথম ৬ ওভার চেষ্টা করব। পরিকল্পনা ছিল, যদি আমরা ভালো শুরু করি, দ্রুত উইকেট যদি না পড়ে, তাহলে আমরা সুযোগটা নেব। কিন্তু যখন আমাদের দ্রুত ৩ উইকেট পড়ে গেল, তখন আমাদের পরিকল্পনা ভিন্ন ছিল—যেন আমরা ম্যাচটা জিততে পারি। তারপরও আমি বলব, মিডল অর্ডার ভালো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যার কারণে ম্যাচটা আমরা হেরে গেছি।’
তিন উইকেট হারানোর পরও ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়নি তাওহীদ হৃদয়কে। অথচ বাংলাদেশের বর্তমান স্কোয়াডের সেরা ব্যাটার তিনি। ছক্কা মারার দিক থেকে অন্য সবার থেকে এগিয়ে হৃদয়। অথচ ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করতে এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়েও তরুণ এই ব্যাটারকে ছয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচ শেষে তাই নাজমুল শান্তর কাছে জানতে চাওয়া হয় হৃদয়কে খেলানোর কারণ। বাংলাদেশের অধিনায়ক জানিয়েছেন, ‘ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আজকে মিক্স আপ করা হয়েছে। এটার কারণ হল আমরা রাইট হ্যান্ড, লেফট হ্যান্ড কম্বিনেশন করার চেষ্টা করেছিলাম। লিটন এক পাশে ব্যাট করছিল, ওদের বোলিংয়ে অনেক বৈচিত্র্য ছিল। ফলে সেজন্য রাইট হ্যান্ড, লেফট হ্যান্ড কম্বিনেশন করা হচ্ছিল এবং এটা সবাই জানত।’
ব্যাটিং নিয়ে আক্ষেপ করলেও শান্ত বোলিং নিয়ে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। এখান থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক কিছু নিয়ে সামনে এগোনোর লক্ষ্য শান্তর। শান্ত বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন তানজিম হাসান সাকিব ও রিশাদ হোসেনের। তাদের নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমি মনে করি পুরো বোলিং বিভাগই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত করেছে। আমি রিশাদের কথা বিশেষ ভাবে বলব। পুরো টুর্নামেন্টেই সে খুব ভালো বোলিং করেছে। তানজিম সাকিবও ভালো করেছে। আমাদের ফিল্ডিংও ভালো হয়েছে। তাই আমি বলব এখান থেকে ইতিবাচক অনেক কিছু নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’
অধিনায়ক বলেন, ‘বিশ্বকাপের পুরো যাত্রা সম্পর্কে বলব, আমরা দল হিসেবে বাংলাদেশের সব সমর্থককে হতাশ করেছি। যারা আমাদের খেলা অনুসরণ করেন, সবসময় অনুসরণ করেন তাদের লেট ডাউন করেছি। তো আমি দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি (টিমের পক্ষ থেকে এপোলোজাইজ)।’
বিশ্বকাপের এবারের আসরে ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ। বেশ কয়েকটি ম্যাচে ছোট ছোট ক্যামিও খেললেও ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি। বিশেষ করে লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, শান্ত ও সৌম্য সরকারদের নিয়ে গড়া টপ অর্ডার ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছেন।
যদিও সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেখিয়ে নাজমুল বলেন, ‘আমরা ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে দেশের মানুষকে ভালো কিছু দিতে পারিনি। এটার জন্য আমরা সরি (উই ফিল সরি)। সামনের দিকে আমাদের এটাই চেষ্টা থাকবে, কীভাবে এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারি।’
বিশ্বকাপের ইতিবাচক দিক নিয়ে শান্ত বলেন, ‘ইতিবাচক দিক অবশ্যই বোলাররা খুবই ভালো বোলিং করেছে। রিশাদ এরকম একটা টুর্নামেন্টে এসে সবগুলা ম্যাচে ভালো বোলিং করেছে। তো বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল। তবে ব্যাটিং দিক থেকে আমরা সমর্থকদের হতাশ করেছি। দেশের মানুষকে আমরা বলতে গেলে কষ্ট দিয়েছি। তবে এতাও আমি বলতে চাই, চেষ্টার কমতি ছিল না। শতভাগ দিয়ে সবাই চেষ্টা করেছে। সবাই নিজের কাজে সৎ ছিল। তবে আমরা দিন শেষে আমরা পারিনি। তাই এটার জন্য দলের পক্ষ থেকে সরি।’
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.