দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এরপর তিনি ৩টি মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন, সামনের মাসে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে সেটি নিয়ে হবে ৪টি।
দেশে টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর। গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তার মানে হলো ২০২২ সালে একজন মানুষের যাবতীয় খরচ যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৮৯ পয়সা। আর মানুষের ভাগ্যে ব্যয়ের এই বাড়তি বোঝা চেপেছে বর্তমান গভর্নরের সময়েই।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা ও জিডিপিতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই লক্ষ্য ঠিক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকও মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে বলে জানা গেছে।
তথ্য মতে, টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। ব্যাংকঋণের সুদহারও ইতিমধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই সামনের মুদ্রানীতিতে নীতি সুদের হার আরও বাড়ানো হতে পারে। এতে টাকা আরও দামি হবে। এর ফলে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, গরিব মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ ২০ শতাংশের ওপরে। চাল, ডাল, চিনি, আটা-ময়দা, শাকসবজি, মাছ-মাংস, ডিম, পেঁয়াজসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই বেড়েছে। এগুলো কিনতেই স্বল্প আয়ের মানুষের আয়ের সিংহভাগচলে যায়।
তারা আরও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদের হার বাজারভিত্তিক রেখেই মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করা যেতে হবে। ডলারের সংকটও অনেকটা কমে এসেছে। কোনো অবস্থাতেই আর টাকা ছাপানোর দিকে যাওয়া যাবে না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে। তারা টাকা ছাপিয়ে সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকেও ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না।
শিগগিরই মুদ্রানীতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এই কমিটিতে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা রয়েছে। পাশাপাশি আরও রয়েছেন অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রারও সংকট রয়েছে। ডলার সংকট কাটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও ভালো ফল আসেনি। রিজার্ভ থেকে ধারবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম ৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৫২ বিলয়ন। সেখান থেকে চলতি দায় বাবদ ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরে নীতি সুদের হার দুই দফা বাড়িয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারের ব্যাংকঋণের সুদে। সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকঋণের সুদে। প্রথম দফায় গত জানুয়ারিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয় ও গত মে মাসে তা ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এর ফলে ঋণের সুদের হার বেড়ে সাধারণত ঋণের চাহিদা কমে যায়। ফলে গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নামে।
অর্থসূচক/ মো.সুলাইমান
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.