ভারতে শেয়ার মার্কেট ধসের পেছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে কারণ খুজে বের করতে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। লোকসভা নির্বাচনের পরপরই রাহুলের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ উঠল।
রাহুল গান্ধীর দাবী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষ নেতারা পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির পেছনে রয়েছেন। রাহুলের দাবি, গত ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন বিজেপির নেতারা শেয়ারের দাম নিয়ে বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়িয়েছেন।
রাহুল গান্ধী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেয়ার ব্যবসায়ীদের শেয়ার ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু নির্বাচনের ঘোষণার পরই শেয়ার মার্কেটে ধস নামে। বাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা এবং তাতে মোদি ও তার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের ভূমিকা তদন্ত করতে যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) কাছে দাবি জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
খবর ইকোনমিক টাইমস।
রাহুলের দাবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগে মানুষকে শেয়ার কিনতে উৎসাহিত করেন। এর ফলে বাজার ধসে বিনিয়োগকারীরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে মোদির দল বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই কংগ্রেস নেতা বলেছেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিনিয়োগকারীদের ‘৪ জুনের আগে শেয়ার কেনার’ পরামর্শ দেন। বিজেপির বিজয়ের প্রত্যাশায় পরে শেয়ারের দাম বাড়বে বলে তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
এটিকে ভারতের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি’ বলে আখ্যা দিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, এই কারচুপির ফলে কিছু ‘সন্দেহজনক বিদেশি বিনিয়োগকারী’ উপকৃত হয়েছেন। এর ফলে হাজার হাজার কোটি রুপি হারিয়েছেন ভারতীয়রা।
তবে মোদির মন্ত্রিসভার বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এই অভিযোগ অস্বীকার করে রাহুলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
বুথফেরত জরিপগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, বিজেপি স্বাচ্ছন্দ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, অর্থাৎ লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৭২টির বেশি পাবে। আর এর নেতৃত্বে এনডিএ জোট মিলে তা ৩৬০-৩৭০ ছুঁয়ে যাবে।
কিন্তু গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলাফল এসব ভবিষ্যদ্বাণীর ধারেকাছেও ছিল না। বিজেপি লক্ষ্যের অর্ধেক আসনও পায়নি। আর এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ আসন। মোদির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর বাজারের সূচক ধসে চার বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামে।
রাহুলের দাবি, বুথফেরত জরিপগুলো ছিল ‘ভুয়া’ এবং ‘অভ্যন্তরীণ জরিপ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন’ থেকে বিজেপিও জানত তারা ২২০টির বেশি আসন জিততে পারবে না।
তিনি বলেন, তার পরও বিজেপি ব্যাপকসংখ্যক আসন জিতেছে বলে বুথফেরত জরিপে দেখানো হয়। আর এ কারণে লোকসভার ফল ঘোষণার আগের দিন ৩ জুন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে শেয়ার কেনেন।
কিন্তু পরদিন ভোটের ফল প্রকাশের পর কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন দেখল ভারতের পুঁজিবাজার। মুহূর্তের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি রুপি বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়।
তবে বিজেপির পীযূষ গয়াল দাবি করছেন, শেয়ারের দামের উত্থান-পতনে ভারতীয়রাই লাভ করেছেন। তিনি বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে বাজারে উত্থানের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেন, যেগুলো ভারতীয়রা কেনেন। একই ঘটনা ৪ জুন বাজার ধসের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করেছেন। আর ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বেশি দামে বিক্রি করে কম দামে কিনেছেন। তাই এক অর্থে এই সময়েও ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা করেছেন। কারোরই ক্ষতি হয়নি।’
সাত দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল, যা শেষ হয় শনিবার (০১ জুন)। ভোট গণনা শেষে ফলাফল আসে ৪ জুন। তবে ভোট গণনার একদিন আগেই ভারতের পুঁজিবাজার চমক দেখায়। এদিন ৭৬ হাজার ৪৬৮ পয়েন্টের রেকর্ড উচ্চতায় উঠে সেনসেক্স। আর এজন্য আবারও নতুন করে আলোচনায় মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপি।
তবে ৪ জুন নির্বাচনী সর্বশেষ ফলাফল আসতে থাকলে ক্ষমতাসীন বিজেপির জয় অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পরে। বিজেপির জোট এনডিএ উল্লেখযোগ্য কিছু আসন হারালে বিনিয়োগকারীদের মাঝে দেখা দেয় সংশয়। আর এর ফলেই বড় পতনের মুখে পরে ভারতের পুঁজিবাজার।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.