রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক উজবেকিস্তান সফরকালে দেশটিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানে সহযোগিতা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক আন্তঃসরকারি চুক্তিটির কার্য পরিসর বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরিবর্তিত চুক্তির অধীনে, উজবেকিস্তানে ক্ষুদ্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
প্রায় একই সময় রসাটমের প্রকৌশল শাখা এতমস্ত্রয়এক্সপোর্ট এবং উজবেকিস্তান পারমাণবিক শক্তি এজেন্সীর অধীনস্থ ডিরেক্টরেট ফর দা কন্সট্রাকশন অফ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টস উজবেকিস্তানে একটি ক্ষুদ্র এনপিপি নির্মানের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
উজবেকিস্তানের জিজাখ অঞ্চলে রুশ নকশায় নির্মিতব্য এই ক্ষুদ্র পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬টি ইউনিট থাকবে, যার প্রতিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মেগা-ওয়াট, অর্থাৎ মোট ক্ষমতা ৩৩০ মেগা-ওয়াট হবে। রসাটম প্রকল্পটির জেনারেল কন্ট্রাকটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এর নির্মান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে।
রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেন, “ক্ষুদ্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানে এটি প্রথম এক্সপোর্ট কন্ট্রাকট, যার মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে রসাটমের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব নিশ্চিত হয়েছে। এটা কোনও প্রাথমিক চুক্তি নয়, চলতি গ্রীষ্মেই আমরা এর নির্মান কাজ শুরু করতে যাচ্ছি”।
উঝাটমের পরিচালক আজিম আখমেদ খাজায়েভ জানান যে পূর্বাভাস অনুযায়ী উজবেকিস্তানে বিদ্যুতের চাহিদা ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় দ্বিগুন হবে। তার মতে, দেশটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থিতিশীল রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর অতিরিক্ত বেইজ-লোড এনার্জী উৎসের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরী।
জিজাখ অঞ্চলে নির্মিতব্য পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সর্বাধুনিক রুশ RITM-200N রিয়্যাক্টর ব্যবহৃত হবে। স্থলভাগে স্থাপনের জন্য এটিতে উদ্ভাবনী ম্যারিন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ১৯০ মেগা-ওয়াট, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মেগা-ওয়াট এবং এর জীবনকাল ৬০ বছর পর্যন্ত।
RITM-200N রিয়্যাক্টর গুলো অত্যন্ত প্রতিকুল আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত আধুনিক রুশ আইসব্রেকার গুলোতে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আইসব্রেকার গুলোর জন্য ১০টি এজাতীয় রিয়্যাক্টর নির্মান করা হয়েছে।
RITM-200N রিয়্যাক্টর ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক এবং এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অনেক বেশি কার্যকরি। এগুলোতে সক্রিয় ও স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুরক্ষা ব্যুহর সমাবেশের মাধ্যমে কোনও দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে প্রায় শুন্যের পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
ক্ষুদ্র পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে, যেমন এর নির্মান কাল অনেক কম এবং প্রয়োজন অনুসারে এর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে সারা বিশ্বেই এ জাতীয় রিয়্যাক্টর গুলোর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি এজেন্সীর তথ্য অন্যযায়ী প্রায় ৫০টি এ জাতীয় প্রকল্প নির্মানের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে, ক্ষুদ্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানে শুধুমাত্র রাশিয়ারই ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা আছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.