‘প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটে কার্যকর করারোপের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হয়নি’

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে বাংলাদেশে ধূমপানের হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনা এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি। উন্নয়ন সমন্বয়সহ দেশের তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে এই বাজেটে সিগারেটের ওপর কার্যকর করারোপের যে প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দিয়েছিলো তা এই প্রস্তাবে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি।

দেশে মোট ব্যবহৃত সিগারেটের ৭০ ভাগের বেশি সবচেয়ে সস্তা নিম্ন স্তরের সিগারেট হওয়ায় এই বাজেটে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটি প্যাকেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিলো। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এই দাম মাত্র ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে এই দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে মনে হলেও- ১০ শতাংশের আশেপাশে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে প্রকৃত পক্ষে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়েনি। এই স্তরের সিগারেটের ওপর ৫৮ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ধার্য করা আছে যেখানে অন্যান্য উচ্চতর স্তরের সিগারেটের জন্য সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে এই ব্যবধান কমাতে নিম্ন স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬৩ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকলেও এই হার বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। প্রত্যাশামাফিক না হলেও নিম্ন স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্কের সঙ্গে উচ্চতর স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্কের ব্যবধান কমিয়ে আনার এ উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।

মধ্যম, উচ্চ, ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটি প্যাকেটের দাম যথাক্রমে ৩ টাকা, ৭ টাকা, ও ১০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৭০ টাকা, ১২০ টাকা, ও ১৬০ টাকা করা হয়েছে। এগুলোর ক্ষেত্রেও তামাক-বিরোধীদের প্রস্তাবনা প্রতিফলিত হয়নি। আপাত দৃষ্টিতে এই সিগারেটগুলোর দাম ৪ থেকে ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে মনে হলেও ১০ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় এই তিন স্তরের সিগারেট আগের তুলনায় আসলে সহজলভ্যই হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত হারে দাম বাড়ানো না হলেও কিছুটা দামবৃদ্ধির কারণে সিগারেটের বিক্রি চলতি বছরের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কমতে পারে। তবে তামাকবিরোধী নাগরিক সংগঠনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে চলতি বছরের তুলনায় আসন্ন বছরে প্রায় ২ শতাংশ সিগারেট বিক্রি কমানো যেতো।

সিগারেটের এই প্রস্তাবিত দাম বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের তুলনায় আসছে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার মতো বাড়তি (১১ শতাংশ বাড়তি) রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে। তবে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাবনা অনুসরণ করলে চলতি বছরের চেয়ে অন্তত ২৮ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যেতো, যা টাকার অঙ্কে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাজেটে এই সামান্য দামবৃদ্ধির কারণে দেশে ধূমপানের হার ১৫.১ শতাংশ থেকে কমে ১৪.৬ শতাংশ হবে। অথচ কার্যকরভাবে দাম বাড়িয়ে যথাযথ করারোপ করা গেলে এই হার আরও কমিয়ে ১৩.৮ শতাংশে আনা সম্ভব হতো বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সমন্বয়।

 

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.