পদত্যাগ করলেন নরেন্দ্র মোদী

পদত্যাগ করেছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার (৫ মে) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি তার এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের এবং মন্ত্রীসভার পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানান মোদী।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৮ জুন অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন মোদী।

মঙ্গলবার (৪ জুন) মধ্যরাতে দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ৫৪২টি আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস। অর্থাৎ বিজেপি একা সরকার গঠনের জন্য ২৭২ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ।

বিজেপিকে সরকার গড়তে হলে নির্ভর করতে হবে প্রধানত দুই শরিক নীতীশ কুমারের জেডি–ইউ ও অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ওপর। এই দুই দলের সম্মিলিত আসন ২৮টি।

সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩ আসন পেয়েছে। ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৪টি আসন।

এদিকে পিছিয়ে নেই বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়াও। সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, জোট সরকার গঠনে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) চন্দ্রবাবু নাইডু ও জনতা দল ইউনাইটেডে বা জেডির (ইউ) নীতীশ কুমারের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। তাদের ইন্ডিয়া জোটে আনতে চাইছে বিরোধী দলটি।

কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ উদ্বেগজনক হতে পারে বিজেপির জন্য। কারণ এই দুই নেতা ছাড়া সরকার গঠন আটকে যেতে পারে মোদির। এখন দেখার বিষয় জোট সরকার গঠনে এগিয়ে যেতে পারে কোন দল।

এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, টিডিপির নাইডু এনডিএ জোট থেকে বের নাও হতে পারে। এছাড়া নীতীশ কুমার ভোটের আগেই শরিক বদলে যোগ দিয়েছিলেন এনডিএতে।

তবে ফলাফল প্রকাশের পর বেশ রহস্যজনক গতিবিধি দেখা গেল নীতীশ কুমারের। ইন্ডিয়া জোটের আরজেডির শীর্ষ নেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে এক বিমানে দিল্লি সফর করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।

বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোটের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। আর এ কারণে জোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) চন্দ্রবাবু নাইডু ও জনতা দল ইউনাইটেডে বা জেডির (ইউ) নীতীশ কুমার।

জোট এনডিএ সরকার গঠন করলে এবং মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে জওহরলাল নেহরুর পর তিনিই হবেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে চলেছেন।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর্যালোচনা করতে বুধবারই বৈঠকে বসেন মোদী। সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক শুরু হয়। এটাই ছিল দ্বিতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের শেষ বৈঠক।

সেখানে শনিবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান প্রথমে আগামী রোববার অর্থাৎ ৯ জুন হতে পারে বলে ঠিক হয়। তবে পরে তা বদলে শনিবার করা হয়।

২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র ৯৪টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট। আর কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলটির।

সে বছরের নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২ আসনে জয় পায়। সে সময় বিজেপির পক্ষে কাজ করেছিল মোদী ম্যাজিক এবং জাতীয়তাবাদী হাওয়া। কিন্তু এবার তার কোনো কিছুই কাজে আসেনি। এবার নির্বাচনে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সে কারণে এনডিএ জোট শরিকদের ওপরই নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.