ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা শেষের দিকে। ইতোমধ্যে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে, ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯২ আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট এগিয়ে আছে ২৩৪টি আসনে। সাধারণ হিসেবে এনডিএ জোটের সরকার গঠনের সম্ভাবনাই বেশি। তবে অতীতের ব্যর্থতা ঝেড়ে ব্যাপকভাবে ফিরে আসা লড়াকু কংগ্রেস হাল ছাড়ছে না। বিজেপির এনডিএ জোটের চেয়ে ৫৪ আসনে পিছিয়ে থেকেও সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস ও তার ইনডিয়া জোট।
কংগ্রেসের এমন স্বপ্ন দেখার কিছু বাস্তবভিত্তিও আছে। নির্বাচনী ফলাফলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তেমন কিছু সম্ভাবনা। আর ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই’ মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হয়ে সামান্য সুযোগটুকুকেই কাজে লাগেতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে কংগ্রেস ও ইনডিয়া জোট।
ভারতের লোকসভায় মোট আসন সংখ্যা ৫৪৩টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ন্যুনতম ২৭২টি আসনের জয় বা সমর্থন। সে হিসেবে বিজেপির এনডিএ জোট বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। যদি এগিয়ে থাকা সব আসনে তারা জয় পায় তাহলে মোট আসন সংখ্যা হবে ২৯২টি, যা ন্যুনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ২০টি বেশি। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকিটা অন্যখানে। এককভাবে বিজেপি ন্যুনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। দলটি যদি এগিয়ে থাকা সব আসনে জয় পায়, তাহলে তাদের মোট আসন দাঁড়াবে ২৩৯টি, যা এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে ৩৩টি কম। তাই বিজেপির সরকার গঠনের বিষয়টি নির্ভর করবে অন্য দলের সমর্থনের ওপর।
এনডিএ জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিকদের মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম এগিয়ে রয়েছে ১৬ আসনে এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) এগিয়ে রয়েছে ১৪ আসনে। জোটের অন্য শরীকদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের শিবসেনার সিন্ধে গোষ্ঠী ৬ আসনে, বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি ৫ আসনে এবং উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোক দল ৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এগিয়ে থাকা সব আসনে জয় পেলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোটের মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩৪টি। ন্যুনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়োজন হবে আরও ৩৮টি আসনে বিজয়ী দলের সমর্থন। এনডিএ জোটে থাকা একাধিক দলকে নিজেদের জোটে টেনে আনা গেলেই কেল্লা ফতে। আর গোপনে গোপনে সে কাজটিই শুরু করেছে এনডিএ জোট।
জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার বিষয়টি নির্বাচনের পরেও জোটে থাকার নিশ্চয়তা দেয় না। রাজনীতিতে এমন কোনো চুক্তির রেওয়াজ নেই। এনডিএ বা ইনডিয়া জোটের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেনি। তাই ইনডিয়া জোট আশা করতেই পারে তারা কয়েকটি দলকে এনডিএ থেকে টেনে নিয়ে আসবে।
ধরা যাক, ইনডিয়া জোট যদি তেলেগু দেশম, জেডি–ইউ, শিবসেনার সিন্ধে গোষ্ঠী ও লোক জনশক্তি পার্টিকে তাদের জোটে ভেড়াতে পারে তাহলে আদের আসন সংখ্যা (১৬+১৪+৬+৫) ৪১টি বেড়ে যাবে। তাতে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৭৫টি, যা ন্যুনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ৩টি বেশি। অন্যদিকে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের আসন কমে হবে ২৫১টি, যা ন্যুনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ২১টি কম। এমন অবস্থা হলে এনডিএ জোট সরকার গঠন করতে পারবে না। সরকার গঠনের সুযোগ পাবে ইনডিয়া জোট।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবর অনুসারে, আজ (৪ মে) ভোটগণনা চলার মাঝখানেই কংগ্রেস সভাপতি খড়গে তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জেডি–ইউ’র নীতীশ কুমারকে ফোন করেছেন। এর পাশাপাশি জোটের অন্যতম কাণ্ডারি মাহরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির প্রধান শরদ পাওয়ারও ওই দু’জনের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। এরবাইরেও তিনি এনিডএ জোটের আরও কয়েকটি দলের সাথে ফোনে প্রাথমিক কথা বলেছেন। দলগুলোর চাওয়া-পাওযা মিলে গেলে তাদের পক্ষে এনডিএ থেকে বের হয়ে এসে ইনডিয়া জোটে যোগ দেওয়া ও সরকারে অংশ নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.