রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কাছে রয়েছে ৮২২ মেট্রিক টন স্বর্ণ

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কাছে এখন ৮২২ মেট্রিক টন স্বর্ণ আছে। বিগত পাঁচ বছরে ভারত ২০৩ দশমিক ৯ মেট্রিক টন সোনা কিনেছে। সেই সোনার কিছু অংশ আরবিআইয়ের কাছে মজুত আছে। এছাড়া কিছু বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছ।

সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু’র এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা যায়, বিভিন্ন দেশ ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছে স্বর্ণ জমা রেখে ডলার নিয়ে থাকে। এ ব্যাংকটির মাটির নিচে থাকা নয়টি বড় বড় ভল্টে এসব সোনার বার থাক থাক করে সাজানো থাকে। খুবই সুরক্ষিত জায়গা এই ভল্ট; কেউ চাইলেই সেখানে যেতে পারেন না। একমাত্র ইংল্যান্ডের রাজা বা রানিই ওই ভল্টে যেতে পারেন এবং জমা সোনা দেখতে পারেন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে স্বর্ণ জমা রেখে ডলার এনেছিলো।

সম্প্রতি ভারত সরকার ইংল্যান্ড থেকে ১০০ মেট্রিক টন সোনা দেশে ফিরিয়ে এনেছে। আগামী মাসে আরও সোনা ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও জানা যায়।

ভারতের মূল আমদানি পণ্য হলো জ্বালানি তেল। ভারত একসময় ইরাকের কাছ থেকেই মূলত তেল আমদানি করতো। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি—এসব কারণে তেলের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। তেলের সংকট সৃষ্টি হয় ভারতে। বাড়তি দামে তেল কিনতে প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত ডলারের। কিন্তু ভারতের অর্থনীতির দরজা তখন বন্ধ। কীভাবে ডলার পাওয়া যাবে, তার পথ খুঁজতে থাকে তৎকালীন ভারত সরকার।

সেই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক থেকে ডলার নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ভারতের। কিন্তু এই দুই সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া মানে একগাদা শর্ত মেনে নেওয়া। ভারত সে সময় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি ব্যাংকে সোনা বন্ধক রেখে ডলার নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি এড়িয়ে অন্য কোনো বিদেশি ব্যাংকে সোনা জমা রাখা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব জাপানের কাছে সোনা জমা রাখে ভারত; তার বিনিময়ে নেয় ডলার। এই পুরো বিষয়টি ভারত সরকার গোপন রাখার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা পারেনি; কয়েকটি সংবাদপত্র সেই খবর ফাঁস করে দেয়। সেই সোনাই এবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ভারত সরকারের স্বর্ণ ফিরিয়ে আনার এ উদ্যোগ নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিদেশি ব্যাংকে রাশিয়ার জমা রাখা সোনা জব্দ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ বিকল্প চিন্তা করছে; ভারতও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.