ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বেনজীর!

মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ ও তার দুর্নীতির তদন্তকে ঘিরে একের পর এক নতুন তথ্য আসছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষেতে আদালত তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে চতুন বেনজীর তার আগেই নাকি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় সব টাকা তুলে নিয়েছেন। তার কোনো একাউন্টেই এখন  উল্লেখ করার মতো টাকা নেই। খোদ দুদক এমন তথ্য জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মো. জহুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা জানতে পেরেছেন-হিসাব ফ্রিজ করার আগেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা তুলে নিয়েছেন সে সম্পর্কিত প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেছেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তারপর প্রকৃত হিসাব বলা যাবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ গত একমাসে তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। মূলত ৫০টি মেয়াদী আমানত (এফডিআর) থেকে এ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাবেক আইজিপির অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করা হয়েছে। হিসাব ফ্রিজের তথ্য হয়ত আগেই টের পেয়েছিলেন তিনি। বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী, মেয়াদি, এসএনডি আমানত হিসাব। কিছু ঋণ হিসাবও আছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ কার্যকরের আগেই আমানত হিসাব থেকে নগদ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, আইন ও বিধি অনুসারে যা যা করা দরকার, করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, হিসাব ফ্রিজ করার আগেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কতটুকু নিয়েছে, তা অনুসন্ধান কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখবেন।

তিনি বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা আইন-বিধি অনুসারে কাজ করছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমাদের টিম কাজ করছে। অল্প সময়ে আমরা অনেক এগিয়েছি।

বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট, কোম্পানির শেয়ার ও ব্যাংক হিসাব ক্রোক ও ফ্রিজের নির্দেশনা দিয়ে ২৩ ও ২৬ মে আদালত থেকে আদেশ দেওয়া হয়। এরই ধারবাহিকতায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়।

গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।

দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.