মাছ ধরা নিষিদ্ধে ভারতের সঙ্গে সময় সমন্বয় করার আহবান

পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের আঞ্চলিক সদস্য ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে “উপকূলের কৃষি ও মৎস সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে করণীয়” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল ১১ টায় সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এবং ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সহ-আহ্বয়ক এমএস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও ধরার সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ঢাকা আর্চ ডায়োসিসের আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ ওএমআই, সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষতি মহিলা আসন, খুলনা) এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক সদস্য এবং ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ প্রমূখ।

গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড মানুষের জন্য। তবে উন্নয়ন করতে গিয়ে যদি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে প্রধানমন্ত্রী তা হতে দেবেন না। গঠনমূলক সমালোচনা থাকলে সরকার আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন। আমি উপকূলের মানুষ, কৃষির মানুষ। সরকার কাজ করছে, বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু এই বরাদ্দ ব্যয়ে যাতে স্থানীয়ভাবে দুর্নীতি না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের পাশাপাশি আমরাও ভূক্তভোগী। তাই আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

এমএস সিদ্দিকী বলেন, উন্নয়ন হতে হবে কিন্তু উন্নয়ন কর্মকান্ডের লাভ-ক্ষতির গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। আমরা জেনেছি, মে থেকে জুন ৬৫ দিন, অক্টোবরে ২২ দিন প্রজননক্ষম মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু সেই সময়ে ভারতের জেলেদের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাঁরা বঙ্গোপসাগরে উভয় এলাকার ইলিশ মাছ অবাধে শিকার করছে। তাতে আমাদের দেশের মৎস সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারকে এই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি যাতে দুই দেশের মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময়কাল সমন্বয় করা যায়।

শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সাইক্লোনগুলো আরো শক্তিশালী হবে আর ঘনঘন আসবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড় রেমাল থেকে আমরা দেখতে পেলাম আগের চেয়ে ধীর গতিতে চলছে আর দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। এটাও জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অভিঘাত। পায়রা বন্দর এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লাবাহী জাহাজ যাতায়াতের কারণে মৎসজীবীরা মাছ শিকার করতে পারছে না। বিরূপ প্রভাব পড়ছে এলাকার তরমুজসহ সমগ্র কৃষিখাতের উপর।

বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেন, উপকূলবাসীর কূল নেই। মানুষ বঞ্চিত হবে, শিক্ষা পাবে না, খাবার পাবে না এটা হতে পারে না। আমাদের সবার জন্য চিন্তা করতে হবে। অন্যের ভালো চিন্তা করতে হবে। অন্যের ভালো করতে না পারলেও মন্দ যেন না করি। মানবজাতিকে একসঙ্গে চলতে শিখতে হবে, নইলে মানবজাতি ধ্বংস হবে। এই বাংলাদেশ আরো মানবিক হয়ে উঠুক। সকলের কল্যাণ হোক।

শারমিন মুরশিদ বলেন, উন্নয়নকাজে সরকারকে কমিউনিটির মতামত নিতে হবে। উপকূলের জন্য কৌশল ঠিক করতে হবে। নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা দেখেছি বাধের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলো কিন্তু কাজ দেখতে পেলাম না। উপকূলের মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে তার জন্য অবশ্যই বাধ নিশ্চিত করতে হবে।

এসময় ইলিশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শীর্ষক গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন ওয়াটারকিপার্সের গবেষণা প্রধান মো: ইকবাল ফারুক, তরমুজ চাষে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শীর্ষক গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন এফএসএল পরিবেশ বিশেষজ্ঞ রফিকুল ইসলাম এবং কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শীষর্ক গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আশিকুর রহমান।

সভায় তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন উপকূল রক্ষায় আমরা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা আন্দোলনের সমন্বয়ক নূর আলম শেখ, কক্সবাজারের পরিবেশকর্মী ফরিদুল আলাম শাহীন, কলাপাড়া পটুয়াখালীর কৃষিজীবী ফরিদ উদ্দিন, পেকুয়া কক্সবাজারের পরিবেশকর্মী দেলোয়ার হোসেন, দাকোপ খুলনার কৃষিজীবী হিরন্ময় রায়, কলাপাড়া পটুয়াখালীর পরিবেশকর্মী মেজবাউদ্দিন মান্নু, বরগুনার পরিবেশকর্মী মুশফিক আরিফ, মোংলার মৎসজীবী রশিদ হাওলাদার, এবং কলাপাড়া পটুয়াখালীর মৎসজীবী ইমরান জমাদ্দার, পাথরঘাটার পরিবেশকর্মী শফিকুল ইসলাম খোকন প্রমূখ।

এছাড়াও উপকূল থেকে আসা পরিবশকর্মী, কৃষক, মৎসজীবীগণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এবং উপকূল অঞ্চলে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার ফলে তাদের কৃষি এবং মৎস সম্পদের সমস্যা তুলে ধরেন। তারা বলেন, উপকূলের মানুষকে আর জীববৈচিত্র্যকে বাঁচাতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামনে আসা সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করার পাশাপাশি উপকূলের কাছাকাছি এলাকাগুলো থেকে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র অপসারণ করতে হবে।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.