লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ৪১ হাজার ফুট উঁচ্চতায় উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দিয়ে অনন্য এক বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশি যুবক আশিক চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের এয়ারফিল্ডে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে স্কাইডাইভ করেন তিনি।
আশিকের দুঃসাহসী এই যাত্রায় স্পন্সর করেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)। বিশ্বে যারা এ ধরনের কাজ করে থাকেন, তাদেরকে স্কাইডাইভার বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে এ ব্যাপারে আশিক চৌধুরী বলেন, সাধারণত বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ৩৫ হাজার ফুটের নিচ দিয়ে চলাচল করে।
মেমফিস সময় সকাল সাড়ে আটটায় বিমান থেকে লাফ দিলেও তারও এক ঘণ্টা আগে আকাশে উড়েছিলেন আশিকরা। এই সময়টা শরীর থেকে সব নাইট্রোজেন অপসারণের জন্য অক্সিজেন মাস্ক পরে তাঁকে বিমানে বসে থাকতে হয়েছে।
আশিক চৌধুরীর এই উদ্যোগের নাম ‘দ্য হাইয়েস্ট এভার স্কাইডাইভ উইথ আ ফ্ল্যাগ’। সফল হলে দ্য ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশন এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুটি রেকর্ড ভাঙবেন তিনি।
রেকর্ড গড়তে ২১ মে রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন আশিক। এরপর এয়ারফিল্ডে দুই দিন অনুশীলনের পর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পূর্বনির্ধারিত (২৫ মে) সময়েই রেকর্ডের প্রচেষ্টা চালান তিনি।
এতো উঁচু থেকে পতাকা হাতে স্কাইডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আশিক বলেন, ‘দুই হাতে পতাকা থাকায় স্কাইডাইভিংয়ের সময় ভারসাম্য রক্ষা বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। আকাশে পাক খেতে শুরু করলে সময়মতো প্যারাস্যুট খোলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আমার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে জরুরি মুহূর্তে প্যারাস্যুট খোলার কৌশল জানা ছিল বলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলাম।’
সফল প্রচেষ্টার পর এখন ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের চূড়ান্ত ঘোষণার অপেক্ষা। এই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি গতকাল উইংস ফিল্ড বিমানঘাঁটিতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আশিকের সঙ্গে থাকা জিপিএস ট্র্যাকারসহ ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছেন। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন এই প্রত্যক্ষদর্শী। তারপর আরও দুজন নিরপেক্ষ বিচারক তা যাচাই করে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।
আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের তিনি সহযোগী পরিচালক। অফিস সিঙ্গাপুরে হলেও মাসের বড় একটা সময় কাটে বাংলাদেশ ও ভারতে।
চাঁদপুরে বাড়ি হলেও বাবার চাকরির সুবাদে আশিকের বেড়ে ওঠা যশোরে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০০৭ সালে স্নাতক হয়েই যোগ দেন দেশের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ছুটিছাটায় ছুটে যেতেন রোমাঞ্চের টানে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেছেন। তারপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানেই ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম স্কাইডাইভিং করেন।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.