কালো টাকা সাদা করার সরাসরি ঘোষণা দেয় জিয়াউর রহমান

টাকার নানা রকমের রঙ হতে পারে। তবে পৃথিবীর কোথাও কালো টাকা নেই। কিন্তু কালো টাকা নিয়ে আলোচনা কোনভাবেই থামছে না। আর বাজেট এলে খুব বেশি আলোচনা হয় কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা মানে অবৈধভাবে অর্জিত কিংবা অপ্রদর্শিত টাকা। কালো টাকার সাদা করার সুযোগ দেওয়ার আলোচনটা শুরু হয়েছিল মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায়। তবে সরসারি ঘোষণাটি আসে জিয়াউর রহমানের সময়ে।

জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ১৯৭৪ সালের শিল্পনীতি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত সেই শিল্পনীতিতে অব্যবহৃত ও নিষ্ক্রিয় তহবিল উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না বলে জানানো হয়েছিল।

তবে সরাসরিভাবে কালোটাকা সাদা করার ঘোষণাটি ছিল ১৯৭৫ সালে জারি করা সামরিক আইনের ৬ নম্বর আদেশে। সেখানে ২৫ শতাংশ কর দিয়ে ‘কর-অনারোপিত আয়’ সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সরকারি পর্যায়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া সেই শুরু।

জানা গেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মূলত কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে এ উদ্যোগ থাকছে। সরকারের অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।

এ ধরনের উদ্যোগকে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একে সাধারণ করদাতাদের ওপর অবিচার উল্লেখ করে বাজেটে এ ধরনের সুবিধা না রাখার পরামর্শ দেন তারা।

অবৈধভাবে অর্জিত সব টাকাই কালো টাকা। আবার বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ হলেও যদি কর দেওয়া না হয়, তাহলে সেটাও কালো টাকার মধ্যে পড়ে। কালো টাকার পাহাড় গড়ে তোলে দুষ্কৃতকারী, কালোবাজারি, কর ফাঁকিবাজ ও আন্ডারগ্রাউন্ডের লোকজন। এছাড়া সোনার বাজার, গৃহায়ণশিল্প, টাকার লেনদেনে হুন্ডির আশ্রয় ও করমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কালো টাকার পাহাড় গড়ে ওঠে।

কালো টাকার লেনদেনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নানা রকমের চক্র আছে। ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি ও ঘুষখোর, মানবপাচারকারীরা এর সঙ্গে যুক্ত। এদের অধীকাংশ অর্থলোভী হওয়ায় তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, সম্পদ ও অর্থ কুক্ষিগত করা।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগের পাশাপাশি সহজ শর্তে পাচার অর্থ দেশে ফেরাতেও বাজেটে দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই অর্থবছরে ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেন, যা ছিল দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ কালো টাকা সাদা করার ঘটনা। এসব বিনিয়োগ থেকে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার।

এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সে সুযোগও কেউ গ্রহণ করেনি। তাই পরের অর্থবছর এ সুযোগ আর রাখা হয়নি।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.