সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ জব্দের আদেশ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর সম্পদ কেনার ৮৩টি দলিল জব্দেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলামের পক্ষে দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত গোপালগঞ্জে তার ৮৩টি দলিলের সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার আবেদন করে। আদালত দুদকের সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে দাবি করা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এর পর বিভিন্ন মহল থেকেই বেনজীরের অবৈধ সম্পদের তদন্তের দাবি উঠতে থাকে।

এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু গণমাধ্যমে তাঁর (বেনজীর) বিষয়ে একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সব প্রতিবেদনে উঠে আসা অভিযোগগুলোর বিষয়ে দুদক আইন অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করেছে।

ওই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য দুদক একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- সংস্থার উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলামের পক্ষে গোপালগঞ্জের জমি এবং বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দের আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

আদালতের আদেশে বলা হয়, দুদকের পিপি আবেদনে বলেছেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী-জীশান মির্জা ও মেয়েদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তারা বাংলাদেশে নামে-বেনামে অর্জিত সম্পদসমূহ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এছাড়া বেনজীর আহমেদসহ তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান ও মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ রয়েছে। তাই বেনজীর আহমেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামীয় অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের আবেদন করেন।

এরপর বিচারক আদেশে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত পিপির বক্তব্য শুনলাম। অপরাধসংশ্লিষ্টের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দাখিল করা দরখাস্ত ও সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পর্যালোচনা করা হলো। ৮৩টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। তাই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হলো। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এই মর্মে আরও আদেশ প্রদান করা হলো যে, ওই হিসাবগুলোর (৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) ওপর অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ জমা করা যাবে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.