সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানপন্থি ৬ যোদ্ধা নিহত

লেবানন সীমান্ত লাগোয়ায় সিরিয়ার এক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েল সিরিয়ার যে এলাকায় হামলা চালিয়েছে সেখানে ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ঘাঁটি রয়েছে। সোমবার (২০ মে) এই হামলায় লেবাননের ইরানপন্থি অন্তত ছয় যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

ইরানে চলছে শোকের ছায়া। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘিরে দেশটিতে পাঁচদিনের শোকের প্রথম দিনে এমন ঘটনা ঘটেছে।

সিরিয়ার হোমস অঞ্চলে ইরানপন্থি গোষ্ঠীটির দুটি অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইসরায়েল। লেবাননের সীমান্তের কাছের সিরিয়ার কুসাইর এলাকায় হিজবুল্লাহ একটি ঘাঁটিও রয়েছে। ইসরায়েলি এই হামলায় ইরান-সমর্থিত অন্তত ছয় যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

তবে ইসরায়েলি হামলায় নিহতরা কোন দেশের নাগরিক সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি সিরিয়ান অবজারভেটরি। হিজবুল্লাহর একটি সূত্র ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, কুসাইর এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতদের মধ্যে তাদের অন্তত একজন যোদ্ধাও রয়েছেন।

সিরিয়ায় বিভিন্ন সময়ে চালানো একক হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে তেমন মন্তব্য করতে দেখা যায় না। তবে তারা বার বার বলেছে, সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতি বাড়াতে দেবে না ইসরায়েল।

এর আগে, গত শনিবার সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, লেবাননের সীমান্তের কাছে হিজবুল্লাহর একজন কমান্ডার ও তার সঙ্গীকে লক্ষ্য করে একটি গাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই হামলায় কোনও হতাহত হয়েছে কি না সেই বিষয়ে কোনও তথ্য দেয়নি তারা। হিজবুল্লাহও শনিবারের হামলায় তাদের কোনও যোদ্ধা নিহত হয়েছেন কি না সেই বিষয়ে ঘোষণা দেয়নি।

তার আগে গত ৯ মে সিরিয়ায় ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠী আল-নুজাবার সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই দিন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের অজ্ঞাত একটি ভবনে হামলা হয়েছে বলে জানায়। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে শত শত বার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সিরিয়ার সামরিক বাহিনী, লেবাননের হিজবুল্লাহসহ ইরান-সমর্থিত অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালায় ইসরায়েল।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা ও ২৫২ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে। সেদিনই গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ওই অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

রোববার প্রতিবেশি আজারবাইজানের সাথে যৌথ অর্থায়নে নির্মিত কিজ কালাসি বাঁধের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ দেশটির সরকারের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। পরে সেখান থেকে ইরানের তাবরিজ শহরে আরেকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাওয়ার সময় ভারজাকান অঞ্চলের দিজামারের পার্বত্য এলাকায় প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।

কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ তল্লাশি অভিযানের পর সোমবার দিজামারের উজি ও পীর গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়। সেখান থেকে ইরানের উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.