এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক এ্যাসোসিয়েমন (এডিবি- আইইএ) এর সেরা ‘ইনোভেটিভ পলিসি রিসার্চ এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেয়েছেন বাংলাদেশী গবেষক প্রফেসর ড. আবু সঞ্চয়। সারা পৃথিবীর দেড় শতাধিকের বেশি অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা পেপারের মধ্যে থেকে এ বছর তিনিসহ সর্বমোট তিনটি পেপারকে এ পুরস্কার প্রদানের জন্য নির্বাচিত করে আইইএ।
শুক্রবার (৩ মে) জর্জিয়ার তিবিলিসিতে অনুষ্ঠিত এডিবি’র ৫৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রফেসর ড. সঞ্চয়সহ নির্বাচিত গবেষকদের হাতে এই পুরুস্কার তুলে দেন এডিবি-আইইএ কর্তৃপক্ষ।
প্রফেসর সঞ্চয় “স্কুল এ্যাটেনডেন্স ইনফরমেশন অর কন্ডিশনাল ক্যাশ ট্র্যান্সফর? এভিডেন্স ফরম এ র্যানডোমাইজড ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট ইন রুরাল বাংলাদেশ” শীর্ষক গবেষণা কর্মের জন্য এই এ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হন।
তার এই গবেষণা কর্মটি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলায় তিনটি মাধ্যমিক স্কুলের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর আট শতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের উপর পরিচালিত হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো- শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কন্ডিশনাল ক্যাশ ট্রান্সফার (সিসিটি) এর ব্যয়-কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে উত্তম বিকল্প পদ্ধতি খুজে বের করা এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্কুলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। কন্ডিশনাল ক্যাশ ট্রান্সফার (সিসিটি) শিশুদের স্কুলে পাঠাতে পরিবারকে উৎসাহিত করার একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পরিবারগুলি তাদের সন্তানদের স্কুলে উপস্থিতির উপর শর্তসাপেক্ষে কিছু নগদ অর্থ পায়, যা পরিবারগুলিকে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে উৎসাহিত করে; ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝড়ে পরা হ্রাস পায় ।
পলিসি গ্রহনের দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি সিসিটি প্রোগ্রাম শিশুদের উপস্থিতির উপর সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলতে পারে, তাহলে সেটি গ্রহনযোগ্য। কিন্তু এই ধরনের হস্তক্ষেপমূলক প্রোগ্রামের ব্যয়-কার্যকারিতা (ব্যয়ের তুলনায় প্রাপ্ত সুবিধা) কম হওয়ায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে সেভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয় নি। এই গবেষণা কর্মে মূলত সিসিটি’র ব্যয়-কার্যকারিতা বিশ্লেষনের পাশাপাশি এর সর্বোত্তম বিকল্প বের করার জন্য সিসিটি’র সাথে প্রথমবারের মতো লস-এভারসন ফ্রেমিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। গবেষণাটি সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির (এসএমইউ) অর্থায়নে মমদা ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করেছে; যা ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলে। স্কুল এ্যাটেনডেন্স ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ফোনে সাপ্তাহিক রিপোর্ট পাঠানো শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে এই গবেষণার তথ্য উপাত্ত থেকে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষক দল। এই গবেষণা কর্মের সাথে প্রফেসর সঞ্চয় ছাড়াও সিঙ্গাপুর ম্যানেজম্যান্ট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. তোমোকি ফুজি, প্রফেসর ড. ক্রিস্টিন হো এবং সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ড. রোহান রায় যুক্ত ছিলেন।
প্রফেসর আবু সঞ্চয় বর্তমানে ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন স্থায়ী সহযোগী অধ্যাপক এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে আব্দুল লতিফ জামিল প্রোভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের সাথে যুক্ত। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের অন্যতম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মমদা ফাউন্ডেশন’ এর উপদেষ্টা এবং এক্সটারনাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবেও যুক্ত রয়েছেন। অর্থনীতির এ্যাপ্লাইড (প্রায়োগিক) ও পলিসি সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে বিভিন্ন গবেষণা করছেন। তার একাধিক কাজ আন্তর্জাতিক পিয়ার-রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ড. সঞ্চয় সাসাকাওয়া ইয়াং লিডার ফেলোশিপ এবং কানাডিয়ান ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স স্টাডি গ্রুপ বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড সহ বেশ কিছু পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন।
অর্থসূচক/ এইচএআই



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.