২০৪১ সাল নাগাদ ৪৯ লাখ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব: আহসান এইচ মনসুর

আর্থিক খাতে মধ্যমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৪৯ ট্রিলিয়ন বা ৪৯ লাখ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে করণীয় নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আহসান এইচ মনসুর।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

প্যানেল আলোচনায় কথা বলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (মেট্রো চেম্বারের/এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আশরাফ আহমেদ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলেন পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। রাজস্ব সংগ্রহে বাণিজ্যিক করের ওপর বিশেষ আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার।

অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক খাত টেকসই করতে করছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা করে করছাড় বাদ দিতে হবে। এতে ৪ বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা যাবে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় তারা নতুন করে টাকা ছাপাবে না। দেশের ব্যাংক খাতে এ বছর সব মিলিয়ে দেড় লাখ কোটি টাকার মতো আমানতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ফলে ব্যাংক খাতের পুরো অর্থ সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজন হলে ব্যক্তি উদ্যোগের কী হবে, এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুরের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমি মনে করি, বেশি ঋণ নেওয়া ভালো জিনিস। যত বেশি ঋণ নেওয়া হবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তত বাড়বে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে কর জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৬ শতাংশ; দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সবচেয়ে কম। আমাদের কর জিডিপির হার সোমালিয়া বা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কাছাকাছি। সংস্কার না করা হলে আগামী বছরে এই হার আরও কমবে। আর ১০ শতাংশের কম কর-জিডিপির অনুপাত নিয়ে উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণ সম্ভব নয়।

এ বক্তব্যের সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সবাই উৎসাহের সঙ্গে বলেন, দেশে কর-জিডিপির অনুপাত হতাশাজনক; কিন্তু তিনি বিষয়টি সেভাবে দেখেন না। কর জিডিপি নিয়ে সোমালিয়া কঙ্গোর সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। সে সব দেশের সঙ্গে তুলনা করলে সব কটি মানদণ্ড নিয়ে তুলনা করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যাদের কর জিডিপি হার বেশি, তাদের রাজস্ব আয়ের উৎস দেখতে হবে। যেমন মালদ্বীপের কর-জিডিপির হার বেশি। সেখানে রাজস্ব আদায়ের মূল উৎস পর্যটন খাত। আমাদের কিন্তু এমন উৎস নেই।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, গত পাঁচ বছরে ১২০ ধরনের করছাড় দিয়েছে সরকার। এভাবে ব্যবসা ও শিল্পে সুবিধার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে করছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে ২৫ বছর ধরে (দীর্ঘদিন) এমন সুবিধা থাকা উচিত নয়।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.