ভারতীয় গুঁড়া মশলায় ক্যান্সারের উপাদান

হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ

ভারতের গুড়া মশলার জনপ্রিয় দুটি ব্র্যান্ড এমডিএইচ ও এভারেস্ট। সাম্প্রতিক সময়ে হংকং ও সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিয়ন্ত্রকেরা ব্র্যান্ড দুটির ৪টি মশলা পণ্যে ক্যান্সারের উপাদান পেয়েছে। এর ফলে ভারতের সরকার দেশের সকল মশলা উৎপাদন কারখানা থেকে নমুনা সংগ্রাহের জন্য খাদ্য কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছে।

ভারত সরকারের একটি শীর্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। তবে এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ফুডস এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছে, দেশের সব খাদ্য কমিশনারকে সতর্ক করা হয়েছে। মশলার নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে দেশের সব মসলা উৎপাদনকারী ইউনিট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

এসব কর্মকর্তারা আরও বলেন, এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ছাড়াও দেশের সব মসলা প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে নমুনা নেওয়া হবে। প্রায় ২০ দিনের মধ্যে ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসবে।

হংকং ও সিঙ্গাপুর কী বলছে?

দেশ দুটির খাদ্য নিয়ন্ত্রকেরা এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ব্র্যান্ডের চারটি পণ্যে ক্যান্সারের উপাদান পেয়েছে। এসব পণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া গেছে। এরফলে হংকং এবং সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা এসব পণ্য ব্যবহার না করতে সতর্ক করেছে।

জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের মাধ্যমে ইথিলিন অক্সাইডকে ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।

এমডিএইচ’র তিনটি মশলা পণ্যে ক্যান্সারের উপাদান পাওয়া গেছে। পণ্য তিনটি হলো- মাদ্রাজ কারি পাউডার (মাদ্রাজ কারির জন্য মশলার মিশ্রণ), সম্ভার মসলা (মিশ্র মসলা পাউডার) এবং কারি পাউডার (মিশ্র মসলা পাউডার)। অন্যদিকে এভারেস্ট ব্র্যান্ডের ফিশ কারি মসলার সাথে কীটনাশক ও ইথিলিন অক্সাইডের উপদান পাওয়া গেছে।

গত ৫ এপ্রিল হংকংয়ের সেন্টার ফর ফুড সেফটি (সিএফএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দেশটির খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এসব পণ্য বিক্রি বন্ধ ও দোকানে থাকা পণ্যগুলো তাক থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।

অন্যদিকে সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি (এসএফএ) এভারেস্টের ফিশ কারি মাসালাও প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ পণ্যটিতে অতিরিক্ত মাত্রায় ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি রয়েছে।

ইথিলিন অক্সাইড কি?

ইথিলিন অক্সাইড একটি জীবাণুনাশক, ধোঁয়া, জীবাণুনাশক এজেন্ট এবং কীটনাশক হিসাবে কাজ করে। ভারতের মসলা বোর্ড ইথিলিন অক্সাইডকে ‘১০ দশমিক ৭ সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রায় দাহ্য, বর্ণহীন গ্যাস হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে৷

এটি প্রধানত চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে এবং মশলায় মাইক্রোবিয়াল দূষণ কমাতে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে উত্পাদিত হওয়ার পাশাপাশি, এটি জলাবদ্ধ মাটি, সার এবং নর্দমা স্লাজ থেকেও তৈরি করা যেতে পারে।

কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-

ভারতে খাদ্য সামগ্রীতে ইথিলিন অক্সাইড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির মশলায় ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফৌজদারি মামলারও ব্যবস্থা রয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সরকার বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন মসলা বোর্ডের কাছে পণ্যে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান যুক্ত না করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে।

মসলা বোর্ড বলছে, ভারতীয় ব্র্যান্ডের চারটি মশলা-মিশ্র পণ্য বিক্রির উপর হংকং এবং সিঙ্গাপুরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্পাইসেস বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর এবি রেমা শ্রী বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

সূত্রগুলো বলছে, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের ঘটনার আগেও তারা নমুনা পরীক্ষা করে আসছিল। এখন পর্যন্ত ভারতীয় বাজারে পাওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মশলায় কোনও ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করছে তারা।

তারা আরও বলছে, এটি নমুনা নেওয়ার একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। আমরা আগে যত নমুনা নিচ্ছিলাম তার থেকে এবার আমরা আরও দ্রুত এবং বেশি সংখ্যায় নমুনা নেব।

ইথিলিন অক্সাইডের স্বাস্থ্যে কী প্রভাব ফেলে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ইথিলিন অক্সাইডকে ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এর ফলে এটি মানুষের মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.