দেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। খাতটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা ঋণ অনিয়ম। এরফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও ঘোষণা করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে এই নীতিমালায় দুর্বল যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে সেটির পরিচালকেরা পাঁচ বছর পর আবার একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফিরতে পারবে বলে যে বিধান রাখা হয়েছে সেটিকে ‘দায়মুক্তি’ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর আবার একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফিরতে এসব পরিচালকদের কিছু শর্ত মানতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যাদের কারণে ব্যাংক খারাপ হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা এ নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়নি। উলটো পাঁচ বছর বিরতির পর তাঁদের আবার পর্ষদে ফেরার বন্দোবস্ত রাখা হলো। অর্থাৎ এ বিধানের মাধ্যমে সেসব পরিচালককে একধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালার দরকার ছিল; সেটি অন্তত হয়েছে। এখন দরকার সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এটিকে আরও কার্যকর ও বাস্তবসম্মত করা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া।
এদিকে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে, ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার। সম্পদের মান ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি। এমনকি ব্যাংক খাতে সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে বলেও সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, একীভূত হওয়া ব্যাংকের কর্মীদের তিন বছর পর্যন্ত ছাঁটাই করা যাবে না। এমনকি একীভূত হওয়ার আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে বেতন ও শর্তে কর্মরত ছিলেন, সেই একই বেতন ও শর্তে তাঁদের বহাল রাখতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিধানের ফলে ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে একধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে। সাধারণত ব্যাংকে প্রতিবছর কর্মীর কার্যমূল্যায়ন করা হয়। তার ভিত্তিতে তাঁদের পদোন্নতি ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। নীতিমালায় খারাপ ব্যাংকের কর্মীদের তিন বছরের জন্য চাকরি ও আর্থিক সুবিধার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। অথচ ভালো ব্যাংকের কর্মীরা প্রতিবছর তাঁদের কাজের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হবেন।
নীতিমালায় স্বেচ্ছায় একীভূত হলে কী করতে হবে, আর স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কী প্রক্রিয়ায় খারাপ ব্যাংককে একীভূত হতে বাধ্য করবে, তার আলাদা আলাদা বিধান করা হয়েছে।
বাধ্যতামূলক একীভূত করা সম্পর্কিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ)’ নীতিমালার আওতায় মূলধন ঘাটতি, উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ, তারল্য ও সুশাসনের ঘাটতিসহ বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হবে। এর মধ্যে ৩ ও ৪ শ্রেণিভুক্ত ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য এক বছর সময় দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে সেসব ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থসূচক/ মো. সুলাইমান
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.