‘যানজটের কারণে পুরোনো ঢাকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে’

যানজটের কারণে পুরোনো ঢাকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কার্যকর ব্যবহার, পার্কিং সুবিধানিশ্চিতকরণ, ফুটপাত অবৈধ দখলদার মুক্ত করা, ওয়ান-ওয়ের পাশাপাশি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুকরা, সুনিদিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্যপরিবহন নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা একান্ত অপরিহার্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ।

মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের জিডিপিতে পুরোনো ঢাকার অবদান প্রায় ২০% হলে, অপর্যাপ্ত অবকাঠমো, যানজট ও অপ্রতুল পরিসেবার জন্য এ এলাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীর ঢাকার যানজটের কারণে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রায় ২.৯% হ্রাস পায় এবং প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া কর্মঘন্টার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। সড়কের খোড়াখুড়ি, অবৈধ ফুটপাত দখল, অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং, অপ্রতুল সড়ক অবকাঠামো ও অকার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে বিশেষকরে পুরোনো ঢাকায় সৃষ্ট সহনীয় যানজট পরিস্থিতি ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ হতে উত্তরণে স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালুকরণ, নদীপথের ব্যবহার বাড়ানো এবং পুরোনো ঢাকার প্রধান সরু ও ব্যস্ত সড়কে একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা চালুকরণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মিসেস নীলিমা আখতার এ মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকার অপরিকল্পিত নগারয়নের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী, আমরাই এটা সৃষ্টি করেছি। নগরের অভিবাবক হিসেবে সিটি কর্পোরেশন নগরের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং সেমতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে তিনি অভহিত করেন। তিনি জানান, কোন ধরনের কর বৃদ্ধি ছাড়াই, সুশাসন নিশ্চিতকরার মাধ্যমে ২০২৩ সালে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১০৩১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল, ২০২০ সালে যার পরিমাণ ছিল ৫১২ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, নগরের জলাবদ্ধতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এবং সম্প্রতি বেশকিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে এ সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত কেরানীগঞ্জে নতুন বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তোলা হবে, সেই সাথে চকবাজার ও মতিঝিল কে পুনরুজ্জীবিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, সায়াদাবাদ বাস টার্মিনালকে আধুনিক সুবিধায় রপ্তান্তরিত করা হয়েছে এবং এটার উদ্বোধনের পর আর কেউ টার্মিনালের বাইরে বাস কাউন্টার স্থাপন করতে পারবে না। দোকানের সামনের হকারদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে যানজট নিরসন ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের সনাক্তকরণে ৬৪টি ইন্টারসেকশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আইওটি) প্রযুক্তি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তা হতে হকারদের উচ্ছেদের বিষয়ট এত সহজ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৮টি স্থানকে হলুদ ও সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে হকাররা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে পারবে, তবে সিটি কর্পোরেশনের চিহ্নিত লাল জোনে কেউ দোকান বসাতে পারবে না।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ পুরোনো ঢাকার বিশেষায়িত সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.