দুটি খারাপ ব্যাংক একীভূত হলে কেমন হবে?

প্রশ্ন সিপিডির

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক উভয়ই খারাপ অবস্থানে রয়েছে। দুটি খারাপ ব্যাংক একীভূত হলে কেমন হবে?- এমন প্রশ্ন রেখেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

শনিবার (২৩ মার্চ) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ‘বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাতে ব্যাংক একিভূতকরণের প্রভাব’ শীর্ষক এক বিশেষ ওয়েবিনারে তিনি এমন প্রশ্ন রাখেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলো কমপ্লায়েন্স মেনে আজকে ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে। অপরদিকে খারাপ ব্যাংকগুলো কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। এজন্য ভালো ব্যাংকে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা কুখ্যাত ব্যাংক নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর আগেও দেশে দু-একবার ব্যাংক মার্জ হয়েছে। তবে সেই মার্জ প্রক্রিয়ার ফলাফল বেশি একটা ভালো না। তবে বিশ্বে এ প্রক্রিয়ায় অনেক ব্যাংক মার্জ হচ্ছে।

তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলো ঋণ খেলাপি ও ব্যবস্থাপনাসহ সব সূচকেই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংক খাত নিয়ে আলোচনা হলেই সন্দেহ হয়, কারণ একেক সময়ে নতুন নতুন নিয়ম আনা হয়। মার্জ প্রক্রিয়ার রোডম্যাপে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ১০টি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা হবে। পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক এই মার্জ প্রক্রিয়ার সূচনা। তবে প্রকৃত দুর্বল ব্যাংক ক্ষমতার দাপটে তালিকা থেকে বাদ পড়লো কিন? সেটাও প্রশ্ন থেকে যায়।

ব্যাংক একীভূত করার পরে কি হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছেন ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি দুর্বল ব্যাংকের খারাপ লোন কিনে নিবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে দেশেতো এরকম সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিই তৈরি হয়নি। এই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির গাইডলাইন তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ১৮ মাস সময় লাগবে বলেও জানায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তাহলে কী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) দেখানোর জন্য তাড়াহুড়ো করে ব্যাংক মার্জ করা হচ্ছে? কারণ আইএমএফ বলেছিলো, ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে হবে এবং নন-পারফর্মিং লোন কমিয়ে আনতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার। এতে ড. ফাহমিদা খাতুনের সঙ্গে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সিডনি পলিসি আনালিসিস সেন্টার অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক জ্যোতি রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন ও অর্থনীতি গবেষক এবং জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা সন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান। এ ছাড়া সমাপনী বক্তব্য দেন গ্লোবাল লেবার অর্গানাইজেশনের (জিএলও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রধান ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ।

জিয়া হাসান বলেন, দেশে ব্যাংকের সংখ্য কমিয়ে আনার প্রস্তাবটি আরবিট্রারি বা যৌক্তিক কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই করা হয়েছে। পাকিস্তানে ৩১টি ব্যাংক, শ্রীলঙ্কায় ২৪টি ব্যাংক, মালয়েশিয়াতে ২৬টি ব্যাংক, ভিয়েতনামে ৪৯টি ব্যাংক এবং বাংলাদেশে ৬৪টি ব্যাংক রয়েছে। একই ধরনের প্রোডাক্ট পোর্টফলিও ও জিওগ্রাফিকাল ডিফারেন্সিয়েশন না থাকা ব্যাংকদের কোন স্ট্রাটেজিক ভ্যালু নাই। কোন ধরনের সিনারজি তৈরি হবে না। ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত যে পথে হাঠছে তাতে পুরোপুরি দায় পড়বে জনগণের উপর। এসব ব্যাংকগুলোর খারাপ সম্পদের দায় কে নেবে? বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি অর্থের যোগান দেয়, তাহলে সেটা হবে খুবই মারাত্মক।

অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের নন-পারফর্মিং লোন বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০-২০১২ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যাংক খাতের বর্তমান এই বিপর্যস্ত অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। অর্থনীতিতে অনেক কিছু কঠিন। তবে ব্যাংকের যেসব সমস্যা তা বিশ্বে অনেকবার ঘটেছে। তাই এ খাতের সমস্যা সমাধান অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি হিসাবের ঘাটতি প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ শতাংশ বাড়ছে। ব্যাংক খাতের বর্তমান সমস্যা যদি ঠিক হয়েও যায় তারপরেও অনেক সমস্যা লেগে থাকবে। কারণ একটা সময় পরে আগের লোন শোধ না করলে ব্যাংক কাউকে লোন দেবে না। এতে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি লোন কমে যাবে। এর ফলে ব্যবসা ও নতুন বিনিয়োগ কমবে। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করলো, সে্ই ঘাটতি জনগণের কষ্টের টাকায় মেটানো হচ্ছে।

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.