সূচক কি ৬ হাজারের নিচে নেমে যাবে?

বড় দরপতনে বুকে কাঁপন ধরেছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের। সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নতুন ভাবনা-মূল্যসূচক কি ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাবে? একবার নেমে গেলে কোথায় গিয়ে থামবে? মঙ্গলবারের পতনের পর বিষয়টি এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে?

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) টানা চতুর্থ দিনের মতো দর পতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। চারদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেরে (ডিএসইএক্স) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৫৯ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমেছে। শুধু মঙ্গলবারেই এ সূচক ৫১ দশমিক পয়েন্ট কমেছে। সূচকটির অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬ দশমকি ৮৭ পয়েন্ট। এখান থেকে আর ৬ দশমমিক ৮৮ পয়েন্ট কমলেই ডিএসইএক্স ৬ হাজারের নিচে নেমে আসবে।

মঙ্গলবার বাজারে অনেকটা ফ্রি ফল (Free Fall) হয়েছে। পতন থেমে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো চেষ্টাই দেখা যায়নি। বাজারে ব্যাপক সংখ্যক বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। আর এ কারণে আগামীকাল যে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে সে আশা তেমনভাবে করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

দেশের পুঁজিবাজারের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ৬ হাজার পয়েন্টকে একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। এতদিন পর্যন্ত তারা মনে করতেন, বাজারে নানা মাত্রায় উঠা-নামা থাকলেও সূচক (ডিএসইএক্স) ৬ হাজারের নিচে নামবে না। তারা বিশ্বাস করতেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূচক ৬ হাজারের নিচে নামতে দেবে না। যদিও মূল্যসূচক বাড়ানো-কমানো বা কোথাও ধরে রাখা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়, তবু অতীতে তাদের নানা কার্যক্রমের মধ্যে সূচককে ধরে রাখার একটা চেষ্টার আভাস দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে বড় দর পতন হলে ব্রোকারদেরকে শেয়ার বিক্রি করতে বারণ করা বা বাড়তি শেয়ার কিনে বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিএসইসি থেকে নিয়মিত ফোন আসার কথা শোনা যায়। বিশেষ করে ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাজারে দরপতন ঠেকাতে ফ্লোরপ্রাইস আরোপের মত নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেয় বিএসইসি, যদিও এ ব্যবস্থার উল্টা মাশুল গুণতে হয় বিনিয়োগকারী ও বাজারকে।

মঙ্গলবার বাজারে দর পতনের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা বড় কোনো গুজবের কথা শোনা যায়নি। তবে বাজার বিশ্লেষকরা গত কিছুদিনের নিম্নমুখীতার পেছনে বেশ কিছু কারণে কথা বলছেন। ফ্লোরপ্রাইসের কারণে গত দেড় বছরে বাজারে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়নি বললেই চলে। এ সময়ে জরুরী প্রয়োজনেও অনেক বিনিয়োগকারী এখান থেকে টাকা তুলতে পারেননি। তারা এখন ধীরে ধীরে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের অনিশ্চয়তা এবং ফ্লোরপ্রাইসের মতো নেতিবাচক ব্যবস্থার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এই বাজারের প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে মন্দ ও দূর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে লাগামহীন কারসাজির ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ কেবলই নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়েছেন। কারসাজিকারীদের দাপটের কারণে ভাল শেয়ারে কোনো মুভমেন্ট ছিল না। তাতে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বাজার থেকে সরে গেছেন। এর মধ্যে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর নিয়ে একাধিক নির্দেশনা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। ঘন ঘন নির্দেশনা পরিবর্তনের ফলে সামগ্রিক বাজার নিয়েই ধোঁয়াশা বেড়েছে। এতসব নেতিবাচক উপাদানের সাথে ব্যাংক আমানতে সুদের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাতে সম্ভাব্য অনেক তহবিল পুঁজিবাজারে না এসে ব্যাংকমুখী হয়ে পড়েছে। তাতে বাজারে তারল্য সঙ্কটও বেড়েছে। এসবের প্রভাব মঙ্গলবারের পতনকে তীব্র করেছে।

তবে সূচক ৬ হাজারের গাঁ ঘেষাঘেষি করে দাঁড়ালেও তা যে ৬ হাজারের নিচে নেমেই যাবে তেমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ পুঁজিবাজার বড় ধরনের অনিশ্চয়তার জায়গা। যে কোনো সময় এই বাজারের দিক পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে বড় দর পতনের পরবর্তী কার্যদিবসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাজারকে বিপরীত আচরণ করতে দেখা গেছে। তাই আগামীকাল বুধবার সূচক হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি।

আবার সূচক ৬ হাজারের নিচে নামলেই যে তা নামতেই থাকবে এমনটি ভাবাও যৌক্তিক নয়। কারণ শেয়ারের দাম কমতে থাকলে বাজারে নতুন ক্রেতা তৈরি হয়। আর এই ক্রেতাদের সক্রিয়তা বাড়লে বাজারে সূচক বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্য ফিরে আসে। তাই সূচকের বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কোম্পানির মৌল দিক বিবেচনা করে শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচতি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.