দিল্লিতে নামাজরত মুসল্লিকে পুলিশের লাথি, তীব্র প্রতিবাদ

ভারতের রাজধানী দিল্লির ইন্দ্রলোক এলাকায় একটি মসজিদ সংলগ্ন সড়কে জুমা নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের মারধর এমনকি লাথি মেরে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। মুসল্লিদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মনোজ কুমার তোমরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, মসজিদে জায়গা না ধরার কারণে মসজিদ সংলগ্ন সড়কের একপাশে কিছু মুসুল্লি নামাজ পড়ছিলেন। কিন্তু সিজদারত থাকার সময়ে দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা তাদের বুটের লাথির আঘাত করেন। ওই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এদিকে, ওই ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা নামাজ পাঠরত মুসল্লিদের লাথি মারার ঘটনাকে ‘ইসলামোফোবিয়া’ বলে অভিহিত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনাকে চিঠি লিখে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের দাবিতে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এ ধরনের ঘটনা বৈশ্বিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারা উত্তর দিল্লির ইন্দ্রলোক এলাকায় রাস্তায় নামাজ পড়া কিছু লোককে লাথি মারার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর নিবন্ধনের দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেসের এমপি ইমরান প্রতাপগড়ি বলেছেন, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত।

দানিশ আলী এমপি বলেছেন, দেশে যে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিরাজ করছে তারই ফলশ্রুতিতে নামাজ পড়তে যাওয়া ব্যক্তিদের লাথি-থাপ্পড় মারার সাহস পাচ্ছে। আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে একদিন ভারতে এক সম্প্রদায়ের লোকেরা রাস্তায় প্রার্থনা করবে, তাদের উপর ফুল বর্ষণ করা হবে এবং অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের আঘাত করা হবে। ওই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা উচিত।

দিল্লির ইন্দ্রলোক এলাকার ঘটনা প্রসঙ্গে গুড্ডু আনসারি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেন, (মসজিদে) শুক্রবার অতিরিক্ত নামাজিরা আসায় ৩ দফায় নামাজ হয় এখানে যাতে সড়কে ভিড় না হয়। কিন্তু কিছু লোক সড়কের একপাশে নামাজ পড়ছিলেন, এ সময়ে পুলিশ তাদেরকে ধাক্কা দেয়, লাথি মারে, চড় মারে। তার দাবি-নামাজের জন্য মাত্র ৪ মিনিট লাগে। পুলিশের এ ধরণের আচরণ উচিত নয়।

মুহাম্মদ হারুণ নামে এক ব্যক্তি বলেন, সড়কের একপাশে কিছু মানুষ নামাজ পড়ছিলেন। এতে যানবাহন চলাচলে কোনোই সমস্যা ছিল না। কিন্তু জানি না, ওই পুলিশ কর্মকর্তার কী সমস্যা হচ্ছিল। অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করায় তারা খুশি বলেও জানিয়েছেন মুহাম্মদ হারুণ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় মিস্টার হক নামে এক ব্যক্তি কাওয়াড়িদের উপর পুলিশ সদস্যদের ফুল বর্ষণের একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, দুই ভারত। দিল্লি পুলিশ ইন্দ্রলোকে দিল্লিতে নামাজ পড়া লোকদের লাথি মারছে। অন্যদিকে, পুলিশ কাওয়াড়িদের রাস্তার মাঝখানে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়।

অশোক কুমার পাণ্ডে নামে এক জন সংশ্লিষ্ট ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, এটা দেখে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আমি এমন নীচতা আশা করিনি। ভাবছি এই ভিডিওটি সারা বিশ্বে গেলে আমার দেশের কী ছবি তৈরি হবে। লজ্জাজনক। লজ্জাজনক। লজ্জাজনক। পার্সটুডে

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.