দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করে সংসদে বিল পাস

সময় সময় মেয়াদ বাড়ানোর বদলে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে দ্রুত বিচার আইন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রণীত এ আইনটি স্থায়ী করতে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় সংসদে ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার-সংশোধন) বিল পাস হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

২০০২ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেদিন মন্ত্রিসভায় বিলের খসড়া অনুমোদনের পর আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এ সংক্রান্ত বিল সংসদে পাস হলো। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনও সংশোধনী আনা হয়নি।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ‘২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিল, তখন আপনারা (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ) বলেছিলেন—এটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। এই আইনটি রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যেকোনও কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সে আইনটি আপনারা রেখেছেন। আমি জানি না কেন রেখেছেন?’

চুন্নু বলেন, ‘যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্য তো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কি এটা বলতে চান—বিএনপি যে আইনটা এনেছিল, তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব যখন গঠন করেছিল, আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। সেই র‌্যাব এখন টিকে আছে, তারা কাজ করতেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ—যদি প্রয়োজন পড়ে এক-দুই বছর আইনের মেয়াদ বাড়ান, কিন্তু আইনটি স্থায়ী করবেন না। করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আফসোস করবেন।’

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আইনটি এনেছিল বিএনপির সময়। ওই সময় আমরা ও আজকের সরকার আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলাম। তারপরও আইনটি পাস হয়েছিল। আজকেও পাস হবে। আমার প্রশ্ন হলো—যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন একরকম থাকবে না।’ তিনি আইনটিকে স্থায়ী না করে চার-পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আইনটি করার সময় বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি ছিল বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সে সময় নানা ধরনের অপরাধ হতো, তাই হয়তো আইনটি তৎকালীন সরকার করেছিল। আমি মনে করি, আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যেন তাৎক্ষণিক বিচার পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায়, সেটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠান যেন এ আইনের মাধ্যমে বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না, অনেকেই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। কারণ একটাই, যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। সংসদ সদস্যদের কেউ বলেননি আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। তারা সময় বাড়িয়ে আইনটি চালু রাখার কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে, আমরা কোনও সংশোধন করিনি। কাউকে উদ্দেশ করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনও রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে।’

সংশোধনীর আলোচনায় মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইনটি ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইনটি করেছিল, আপনারা তার বিরোধিতা করেছিলেন কেন? এখন ভালো হয়ে গেলো! আপনি বলেছিলেন—অপপ্রয়োগ হয় কিনা যারা আন্দোলন করতেছে তারা বলতে পারবে। আমরা যদি কখনও আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই, তখন বলতে পারবো অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা।’

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইনটি কখন আনা হয়েছিল তা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে।’

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.