শেষ হলো আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি প্রদর্শনী

অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে এনে দেশে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার, অগ্নি-সুরক্ষা নিশ্চিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং অগ্নি সুরক্ষা নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘৯ম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪’।

প্রদর্শনীর শেষ দিনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় ১৩ টি প্রতিষ্ঠান ও অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে সাহসী ভূমিকার জন্য ৫ ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও স্মারক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অগ্নি নিরাপত্তা সামগ্রী ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এত অগ্নিকাণ্ডের পরও দেশের শিল্পগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৪৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করেছি, যারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে আসার আগেই আগুন নেভাতে ভূমিকা রাখতে পারবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে এখনকার ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আরো বেশি সতর্ক। আমাদের সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সিভিল ডিফেন্সের উন্নতি করা।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে আমাদের সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্মাণ ব্যয়ের ২ শতাংশ এ খাতে খরচ করতে হবে।

সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো.জসিম উদ্দিন বলেন, উন্নত বাংলাদেশে গড়তে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই অগ্নি নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিতে হবে। এইচএসবিসির ঘোষণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৯ম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। অন্যান্য খাতের মতো ফায়ার সেফটি খাতেও অনেক বড় ভোক্তা রয়েছে আমাদের। কাজেই এখন সময় এসেছে দেশেই ফায়ার সেফটি পণ্য উৎপাদন করার। শুধু বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে দেশেই ফায়ার সেফটি পণ্য উৎপাদনের জন্য এ খাতের সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ইসাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম শাহজাহান সাজু, প্রচার সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসাবের সহ-সভাপতি মোঃ মতিন খান, মোহাম্মদ ফয়সাল মাহমুদ, ইঞ্জি. মোঃ মনজুর আলম, এম মাহমুদুর রশিদ, যুগ্ম মহাসচিব মো. মাহমুদ-ই-খোদা, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ইঞ্জি মোঃ মাহাবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ মোঃ নূর-নবী, পরিচালক মো. ওয়াহিদ উদ্দিন, ইঞ্জি. মো. আল-ইমরান হোসেন, মেজর মোহাম্মদ আশিক কামাল, মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

ইসাব সেফটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন যারা:  আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক ভবনে বিল্ডিং কোড মেনে চলা ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ‘ইসাব সেফটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আবাসিক ভবন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে র‌্যানকন আর্টিস্টি রেসিডেন্সেস, দ্বিতীয় হয়েছে শেলটেক রুবিনুর, এবং তৃতীয় হয়েছে কনকর্ড শাপলা।  বাণিজ্যিক ভবন ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে শান্তা ফোরাম, কনকর্ড এমকে হেরিটেজ এবং বিজিএমইএ। শিল্প ভবন (তৈরি পোশাক) ক্যাটাগরির ৩টি পর্যায়েই যৌথভাবে ৬টি প্রতিষ্ঠান বিজয়ী হয়েছে। এরমধ্যে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে গ্ল্যামার ড্রেসেস লিমিটেড এবং ডিজাইনটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড, যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে তাসনিয়া ফ্রেব্রিক্স লিমিটেড ও এসকিউ বিরিচিনা লিমিটেড এবং যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে স্টারলিং ডেনিমস লিমিটেড, সিল্কেন সুইং লিমিটেড। এছাড়াও শিল্প ভবনের অন্যান্য ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছে বিএম কন্টেইনার ডিপোট লিমিটেড।

অগ্নি-নির্বাপন ও উদ্ধারকাজে বিশেষ ভূমিকার জন্য সম্মাননা পেলেন যারা: এদিকে অগ্নি-নির্বাপন ও উদ্ধারকাজে সাহসী ভূমিকার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ৫ ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে ইসাব। অগ্নি-নির্বাপন ও উদ্ধারকাজে সাহসী ভূমিকার জন্য সম্মাননা পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফয়সালুর রহমান, মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন সরকার, ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল ইসলাম এবং ফায়ার ফাইটার আলহাজ মিয়া।

উল্লেখ্য, গত ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীর কো-পার্টনার হিসেবে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে FEBOAB, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই প্রদর্শনীতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে এফবিসিসিআই।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.