দিল্লিতে কৃষকদের বিক্ষোভ-আন্দোলন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে ১২ মার্চ পর্যন্ত সমস্ত বড় সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ পুরো রাজধানীতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
যদিও মঙ্গলবার সকালে পাঞ্জাবের ফতেগড় সাহিব থেকে কৃষকদের বিক্ষোভ এবং ‘দিল্লি চলো’ অভিযান শুরু হলো। কয়েক হাজার ট্রাক্টর সেই অভিযানে অংশ নিয়েছে। পাঞ্জাবের সীমানা পর্যন্ত আসতে কৃষকদের কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে শম্ভু সীমানায় আসতেই বাধা পেলেন কৃষকরা। তাদের উপর এসে পড়তে লাগলো একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের সেল। ড্রোন থেকে কৃষকদের জমায়েতের উপর সমানে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফেলা হলো। ভারতে এই প্রথমবার বিক্ষোভ সামলাতে ড্রোন থেকে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফেলা হলো।
কৃষকরাও তৈরি হয়ে এসেছিলেন। যে সামান্য সময় তারা পেয়েছিলেন, তার মধ্যে বেশ কিছু ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেন তারা। কৃষকদের প্রত্যেকের মুখ ঢাকা ছিল। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পুলিশ ও ড্রোন থেকে সমানে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানোর ফলে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ডেকে যায়। কৃষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। প্রচুর ডিজেল এবং খাবারদাবার নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে যাচ্ছেন। অন্তত ছয় মাস তাদের যাতে কোনো অসুবিধায় না পড়তে হয়, তার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা।
পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের কৃষক হরভজন সিং এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, ‘ছুঁচ থেকে শুরু করে পাথর ভাঙার যন্ত্র পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সঙ্গে আছে। আমাদের কাছে এতটা ডিজেল আছে যে, আমরা কিছুটা হরিয়ানার ভাইদেরও দিতে পারব।’ নিজের ট্রাক্টরের সঙ্গে দুইটি ট্রলি নিয়ে চলেছেন হরভজন। তাতে সব জিনিসপত্র আছে।
কৃষকদের টাক্টরগুলি ত্রিপলে ঢাকা আছে। তার মধ্যেও প্রচুর জিনিস রয়েছে।
কিসান মজদুর মোর্চা ও সংযুক্ত কিসান মোর্চা এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আছে ৩৫০টির মতো ছোট-বড় কৃষক সংগঠন। গতবারের নেতৃত্বে থাকা রাজেশ টিকায়েত এবার আন্দোলনে নেই। বরং সারওয়ান সিং পান্ধের ও জগজিৎ সিং দাল্লেওয়ালকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। পাঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে সাংরুরের কৃষকদের সংখ্যাই বেশি।
কৃষকদের এবার প্রধান দাবি হলো- ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন করে তাদের ফসলের জন্য ন্যুনতম সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করতে হবে। প্রতিবছর তারা সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করবে। আইন মেনে সবাইকে সেই দামে ফসল কিনতে হবে। কৃষকদের ঋণ মকুব করতে হবে। কৃষকদের বিরুদ্ধে যে সব মামলা করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। কৃষকদের জন্য স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ রূপায়ণ করতে হবে।
সোমবার রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের আলোচনা হয়। সেখানে কৃষরদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়ে সরকার রাজি হয়। ইলেকট্রিসিটি আইন বাতিল করার বিষয়টি নিয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়। কিন্তু প্রধান তিন দাবি ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণ করা ও ঋণ মকুব নিয়ে সরকার কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হয়নি। ফলে আলোচনা ভেস্তে যায়।
এখন ২৩টি শস্যের ক্ষেত্রে সরকার ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করে। সেই দামে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনে। কৃষকরা এখন চাইছেন, সরকারকে আইন করতে হবে। তারা যে সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করবে, সেই দামেই সবাইকে ফসল কিনতে হবে। তার নিচে কেউ কিনতে গেলে তা অপরাধ বলে গন্য হবে। হরিয়ানা থেকে যে রাস্তা দিয়ে কৃষকরা ঢুকতে পারে, তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিল্লির সীমানার অবস্থা অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হয়েছে। মোটা মোটা লোহার পেরেক সিমেন্ট দিয়ে রাস্তায় বসানো হয়েছে। সিমেন্টের ব্যারিকেডের সঙ্গে লোহার রড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ হাতে করে কাঁটা লাগানো পাত নিয়ে ঘুরছে। ট্রাক্টর জোর করে ঢুকতে চাইলে তার ধাক্কায় টায়ার ফুটো হয়ে যাবে।
সাংবাদিক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ হরবীর সিং ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘এমএসপি নিয়ে আইন হওয়াটা জরুরি। কৃষকদের কাছ থেকে ফসল যেই কিনুক, তাকে ওই ন্যূনতম দাম দিয়েই কিনতে হবে। সরকার বলছে, তারা ভর্তুকি দেয়। কিন্তু ভর্তুকি দেয়া হয় ক্রেতাদের জন্য। সরকার দুই ও তিন টাকায় গম ও চাল গরিবদের জন্য ভর্তুকিতে দিচ্ছে। এতে কৃষকদের কোনো লাভ হয় না। কৃষকদের ফসল ফলানোর খরচ বাড়ছে। বেড়েই যাচ্ছে। অথচ, তারা ফসলের দাম পাচ্ছে না, এটা চলতে পারে না।’
এবারও কি আন্দোলন গতবারের মতো তীব্র হতে পারে? হরবীরের জবাব, ‘সম্ভাবনা আছে। প্রস্তুতিও আছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। কৃষকদের মনে হয়েছে, নির্বাচন আসছে। দাবি আদায়ের জন্য এর থেকে ভালো সময় আর হতে পারে না। আর এই দাবি কেন্দ্রীয় সরকার পূরণ করতে পারে। তাই তারা দিল্লিতে এসে বিক্ষোভ দেখাতে চাইছে। তাদেরও প্রতিবাদ করার অধিকার আছে।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, পিটিআই, এএনআই
#WATCH | Haryana: Concrete slabs, iron nails, barricades, barbed wires, police and paramilitary personnel deployed in Haryana's Jind as a measure to maintain law and order in view of farmers 'Delhi Chalo' march pic.twitter.com/GNFrVaoxIy
— ANI (@ANI) February 13, 2024
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.