দেশের ব্যাংক খাতে প্রতি বছর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপি ঋণের বিদ্যমান পরিমাণের বাইরে প্রতি বছর বিরাট অংকের খেলাপি ঋণকে রাইট অফ বা ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে। অবলোপন করা ঋণ ব্যালেন্স শীটের অন্তর্ভুক্ত থাকে না বিধায় তা খেলাপি ঋণ হিসেবেও প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বিভিন্ন মেয়াদে রিশিডিউল করেছে এখানেও সে ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। আমদানি-রপ্তানি নিয়েও তথ্য বিভ্রাট রয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মধ্যে। সব দিক বিবেচনায় দেশের ব্যাংকিং খাত এখন ‘উল্টো রথে’। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে খেলাপি হলে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতায় মারা যান। ঋণ খেলাপি বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন না, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন না, সামাজিতভাবেও নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে। আমাদের এখানে ঋণ খেলাপি মহা আনন্দে থাকেন।
নতুন ব্যাংক নিয়ে সাবেক এ গভর্নর বলেন, একটা ব্যাংক খোলা হবে আর শহরে কিছু শাখা দিয়ে চলবে এটা দরকার নেই। তাদেরকেতো প্রান্তিক পর্যায়ে শাখা খুলতে হবে, হাওড় এলাকায় শাখা পরিচালনা করতে হবে। একটা সময় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হলে তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি এ খাতের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে। কিভাবে চলতে হবে তারা আমাদের দিবে আমরাও তাদের প্রতিবেদন দিবো। কিন্তু ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত আসলে রাজনৈতিকভাবে। এতে ব্যাংকে খেলাপি বাড়ছে।
সাবেক ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ঋণের সুদহারের উদ্ধসীমা ঠিক করে দেওয়ার বাস্তবতা আছে। কিন্তু দেশের বাস্তবতা আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক বোঝে না। অর্থনীতির হৃদপিন্ড হলো ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান। হার্ট ভালো থাকে রক্ত সঞ্চালনের কারণে। আজ আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ঋণ মানে আন্তর্জাতিকভাবে যে অবনতি হয়েছে তা আর্থিক খাতের কারনেই হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা সময় ব্যাংকে রোডম্যাপ ছিল। তবে কিছু লোকের কারনে সেগুলো সব চলে গিয়েছে। এখন আবারও কেনো সেই বিধি-বিধানের কথা বলা হচ্ছে, ঋণ খেলাপির সজ্ঞা আরও আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। রোডম্যাপ যে করা হচ্ছে সেই রোডম্যাপ দিয়ে আমরা কতদূর আসলাম, কি কারনে সেখান থেকে বিচ্যুত হলাম তার যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। তার যৌক্তিক কারন না বুঝে আবারও রোডম্যাপ করলে কোন কাজ হবে না।
দেশের প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সুদহার বেধে দেওয়া বিষয় নিয়ে খুবই আলোচনা হচ্ছিল। এই সুদহার এক জায়গায় বেধে দেওয়া হবে কি না, সেটা ছয় বা নয় শতাংশ হবে ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে নাকি সম্পন্ন উদার করে দেওয়া হবে, ঋণ ও আমানতের চাহিদা অনুযায়ী সুদের হার নির্ধারণ হবে ইত্যাদি। এটা এক সময় করা হয়েছিল, তখন এ নিয়ে অনেক লেখালেখি করা হয়েছিল এর পক্ষে-বিপক্ষে।
তিনি বলেন, শুধু আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝে না। একবারে সম্পন্ন ছেড়ে দিলে যেগুলো ছোট ছোট ব্যাংক, যারা নাজুক অবস্থা আছে যারা আমানত পাই না তারাতো আমানতের জন্য বেশি সুদহার দিয়ে আকৃষ্ট করতে চাইবে গ্রাহককে। যারা খুব নিরপাদ ঋণ গ্রহিতা না, রিস্কি ঋণ গ্রহিতা, তাদেরকে ঋণ দিয়ে আপাতত বেচে থাকতে চাইবে। সেখানেও সমস্যা তৈরি হবে। এটার আপাতত একটা সীমা থাকা দরকার।
অর্থসূচক/এমএইচ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.