এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী আমাদের বেশ কিছু ওষুধের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা হারাবে দেশ। এর মধ্যে ইনসুলিনসহ নতুন নতুন রোগের ওষুধ তৈরিতে ৮ গুণ পর্যন্ত খরচ বেড়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ডব্লিউটিও নলেজ শেয়ার’ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক এর পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। বক্তব্য রাখেন ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খান, অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ, মুস্তফা আবিদ খান।
ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু পণ্যে প্রণোদনা কমানো হয়েছে এটা আমাদের এলসিডি উত্তরন প্রস্তুতি। তবে আমাদের এখন ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরে কি করনীয় তা এখন থেকে ভাবতো হবে। কপননা এলডিসির পরে অনেক কিছু সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দেশ। বিশেক করে ২৬ সালের নভেম্বরে গ্র্যাজুয়েশন হবার পর পরই বেশ ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ত্ব সুবিধা ভোগ করার জন্য বাড়তি শুল্ক প্রদান করতে হবে। এতে ওষুধের প্রকারভেদে দাম বেড়ে যাবে। বিশেষ করে ইনসুলিনের প্যাটেন্ট কিনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দাম বাড়বে কমপক্ষে ৮ গুন। এটার আগাম প্রস্তুতি না হলে হঠাৎ করে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এলডিসি দোহা সম্মেলনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনা ছিল। এসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাজার ব্যবস্থার সাথে সরাসরি জড়িত। এজন্য বাজার ব্যবস্থাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশনের ক্ষেত্রে নোটিফিকেশন করা হয়। সেক্ষেত্রে ইলিশ মাছ ধরাকে সামুদ্রিক মৎস আহরণ বলা হয়ছে। অথচ ইলিশ সাধারণত নদীর মিঠা পানিতে ধরা হয়। পরবর্তীতে এটা উল্লেখ করে নোটিফিকেশন করার সময় এ বিষয়টি উল্লেখ করে এলডিসির ক্ষেত্রে পরিবর্তন চাইতে হবে। সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করতে হবে। তাহলে ইলিশ আহরণে ভর্তুকি সুবিধা দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরে কৃষির ক্ষেত্রে বড় ধরনের চুক্তি দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে সবুজ অর্থায়নে ভর্তুকি দিতে চালু রাখতে ১০ শতাংশ হিসাব করা যাবে না। কারন এই সুবিধা অনেক আগে থেকেই চালু করা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে (মরিটরিয়াম) বিশেষ সুবিধা বাতিলের ক্ষেত্রে প্রতিবেশি বা অন্য কোন দেশের কথা শোনা উচিত না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে হওয়ার পরে ডব্লিউটিও (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) যে বিশেষ শুল্ক সুবিধা চালু রাখার কথা বলা হয়েছে তা রাখাটা বাধ্যতামূলক থাকবে না। এক্ষেত্রে কোন কোন পণ্যের ট্যারিফ (শুল্ক) শূন্য থেকে ২০০ বাড়লেও এটাকে বাধা দেওয়ার আইনগত ভিত্তি থাকবে না। এতে খরচ বহুগুণ বেড়ে যাবে। যা তখন প্রতিযোগী দেশের সাথে টিকে থাকা কঠিন হবে। এলডিসির পরে যে সুবিধাগুলো থাকছে তারনওপর ভরসা করা যাচ্ছে না। কারন এর আগে বলা হয়েছিল ১২ বছর সুবিধা থাকবে এখন বলা হচ্ছে ৩ বছর।
ড. মশিউর রহমান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে মূলত প্রযুক্তি, কৃষি, মৎস আহরণ ও স্থানান্তর এবং ব্যবসার শুল্ক সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এগুলোর বর্তমান ও আগামীর বাসৃতবতা এক নয়। এক সময় এক রাকায় ১০ থেকে ১২টা ইলিশ পাওয়া যেতো তখন মাছ ধরা অনেক সহজ ছিল, খরচও কম হতো। কিন্তু সেই লিশ এখন ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। মাছ ডিম দেওয়ার জন্য নদীতে আসে, এসব মাছ গতানুগতিক যন্ত্র, জাল ও নৌকা দিয়ে ধরা হয়। এসব ক্ষেত্রে উমৃনতমানের ফিশিংএী জন্য প্রণোদনা চলমান রাখা যেতে পারে। কিন্তু এলডিসি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে তা সম্ভব না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক জটিল ও কঠিন শব্দ প্রয়োগ হয়। সেক্ষেত্রে মান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশন হলো নতুন ধারনা। মূলত এটা তৃতীয়মাত্রীক সমন্বয়। এলডিসি বিষয়ে পেছনে হাটবো না, সামনের দিকে আগাতে চাই। তবে নতুন করে খাপ খাওয়াতে হবে। আগে প্রস্তুতি শুরু করা দরকার ছিল, কিছুটা সময় লস হয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপাতত কিছু বিবেচনা করা হবে না। কেননা এলডিসি থেকে বের হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দেশের দাম বাড়বে। রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও অন্যান্য সুবিধা কমলে সেক্ষেত্রে ভ্যালিএডিশন বাড়াতে হবে।
শরিফা খান বলেন, ডব্লিউটিও’র যেসব সুযোগ রয়েছে তা ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে ওষুধের ক্ষেত্রে থাকবে না। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতে বর্তমান ৬৬ শতাংশ সুবিধা নাও থাকতে পারে। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য শুল্ক, ভর্তুকি পরিস্থিতি নোটিফিকেশন করতে হয় কিন্তু আমরা এটাতে অনেক পিছিয়ে আছি। এটার ইচ্ছে থাকলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন। তবে নোটিফিকেশন করলে সক্ষমতা বাড়ে।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.