কারখানা বন্ধের খবরেও থামছে না শেয়ার-মূল্যের অস্বাভাবিক উল্লম্ফন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের (কেপিপিএল) উৎপাদন দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ আছে। তারপরও বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এমনকি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ থাকার খবর জানানোর পরও এই উল্লম্ফন থামেনি।খবর প্রকাশের দিন থেকে টানা দুদিন শেয়ারটির দাম বেড়েছে; যার মধ্যে দ্বিতীয় দিনে দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

গত ৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিয়ে আসছে খুলনা প্রিন্টিং। এর মধ্যে থেকে থেকেই বন্ধ হচ্ছে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম। সর্বশেষ প্রায় দু’বছর ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ আছে বলে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সংবাদ থেকে জানা যায়। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভুত লোকসান ও দায় তার পরিশোধিত মূলধন, এমনকি সম্পদকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি হিসাববছরের (২০২৩-২৪) দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারের বিপরীতে দায় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৯৮ পয়সা।

তবে কোম্পানির অবস্থা চরম নাজুক হলেও বাজারে এর শেয়ার মূল্যে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। বেশ কিছুদিন ধরে রহস্যজনকভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩০৬ শতাংশ।

তিন মাসে আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিলো মাত্র ১৪ টাকা। এই তিন মাসে বন্ধ থাকা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। আজ কোম্পানিটির দাম ঠেকেছে ৫৬ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারে দাম বেড়েছে ৪২ টাকা ৮০ পয়সা।

জানা গেছে, খুলনা প্রিন্টিং নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত নানা খবর আর শেয়ারের দামে অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ডিএসইর একটি টিম কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন করে। তারা কোম্পানিটির কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ দেখতে পেয়েছে। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) খুলনা প্রিন্টিংয়ের কারখানা বন্ধ থাকার এ খবর ডিএসইর ওয়েবসাইট ও ওয়ার্কিং স্টেশনে প্রকাশ করা হয়। তবে তাতেও কোম্পানির শেয়ারের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায় প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ। ডিএসই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) খুলনা প্রিন্টিংয়ের কারখানা বন্ধ থাকার খবর পুন:প্রকাশ করে। তবে তাতেও কোনো কাজ হয়নি। বরং আজ বাজারে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায় আগের দিনের চেয়েও বেশী হারে। এদিন ডিএসইতে শেয়ারটির দাম ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৫৬ টাকা ৮০ পয়সা দাঁড়ায়। আর এর মাধ্যমে এটি জায়গা করে নেয় দরবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের এই মূল্য বৃদ্ধি মোটেও স্বাভাবিক নয়। খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারসাজিকারীদের ভূমিকা থাকতে পারে। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক না হলে এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

তারা খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারের এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.