ফের ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে রিজার্ভ

দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। রফতানি আয়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ। বর্তমানে রিজার্ভ কমে ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ তিন পদ্ধতিতে রিজার্ভ প্রকাশ করে। এর মধ্যে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নিজস্ব হিসাব ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পদ্ধতি ‘বিপিএম ৬’ বাংলাদেশ ব্যাংক সবার জন্য প্রকাশ করে। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব শুধু আইএমএফকে জানানো হয়।

আইএমএফ’র পদ্ধতি অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো ২ হাজার ২ কোটি ডলার। এর মাত্র আট দিন পরে অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ডলার। এই সময়ের মধ্যে রিজার্ভ কমেছে ৮ কোটি ডলার।

অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত ২৪ জানুয়ারি রিজার্ভ ছিলো ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার। যার পরিমাণ ৩১ জানুয়ারি কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০৯ কোটি ডলারে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ের মধ্যে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ১৪ কোটি ডলার।

প্রকৃত রিজার্ভ শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফকে জানানো হয়। প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর কী পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ রাখতে হবে, তা-ও ঠিক করে দেয়। এর ফলে প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সাধারণত যে কোন দেশের কাছে ন্যূনতম রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারন করে। সংকটের প্রভাবে বিভিন্ন পণ্য আমাদনি ব্যহত হচ্ছিলো। এর পলে ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে মার্কিন ডলারের চাহিদা। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে। এর ফলে রিজার্ভ ব্যাপকহারে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ঘরে। একইসঙ্গে কমতে থাকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের পরিমাণ। এতে দেশের মধ্যে ডলারের সংকট আরও বেড়ে যায়। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিনিয়ত ডলারের দামে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত আসছে। তারপরও সংকট কাটছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার বন্ধক রেখে টাকা ধার নিতে পারবে। ডলার ও তারল্য সংকট নিরসনে নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ কিছু ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার থাকে। আবার কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রিজার্ভ থেকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে এক বিলিয়ন ডলারের মতো কিনে নিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সংকটের মধ্যে আশানুরূপ প্রবাসী আয়ও আসছে না। রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ উত্থান-পতনের মধ্যে চলছে। কোন মাসে প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের পরিমাণ বাড়ছে, আবার কোন কোন মাসে রেমিট্যান্সে পতন হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ১৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যেখানে এর আগের পুরো মাসে এসেছিলো ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.