দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছে ডলার সংকট। সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে ছাড়ছে ডলার। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে থাকায় ধার করে চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবারের মুদ্রানীতির পরেও ডলারের দর বাজারের ওপর ছাড়বে না আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। একইসঙ্গে মুদ্রানীতিতে কমানো হচ্ছে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় মুদ্রানীতির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। আগামী ১৭ জানুয়ারি বিকাল ৩ টায় মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার দাবি তৈরি হলেও নতুন মুদ্রানীতিতেও এটি বাজার ভিত্তিক হচ্ছে না। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, রোববার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মুদ্রানীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মুদ্রানীতি সম্পর্কে এখনি বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। এটি ঘোষণা করা হলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতি সুদহার বাড়ানোসহ নানা ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলকি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। নীতি সুদহারসহ ব্যাংক ঋণের সবরকম সুদ আরও বাড়িয়ে সংকোচনমুখী ধারা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য চলমান সব ধরনের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোও চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিলো ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু কোনো মাসেই এই খাতের লক্ষ্য পুরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এমনকি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের ৫ মাসই প্রবৃদ্ধি ছিলো এক অঙ্কের ঘরে। শুধুমাত্র গত অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছিলো।
জানা যায়, সংকোচন নীতির কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ তলানিতে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের মুদ্রানীতিতেও সংকোচন নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ৯ থেকে ৪০ বেসিসি পয়েন্ট কমিয়ে ১০ দশমিক ৫ ধরা হতে পারে।
অপরদিকে সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ বর্তমানে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম।
অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.